বানর থেকে ক্রমবিবর্তনে জন্ম নিয়েছিল মানুষ। আর তার জন্মভূমি ছিল আফ্রিকা। কিন্তু প্রাচীন সভ্যতার প্রসঙ্গ উঠলে, সামনের সারিতেই উঠে আসবে ব্যাবিলন, মিশর কিংবা সিন্ধুর নাম। কিন্তু সত্যিই কি সভ্যতার দিক পিছিয়ে ছিল আফ্রিকা? বিশ শতকের শুরুর দিকেও ভাবা হত এমনটাই। তারপরই বদলে যায় পরিস্থিতি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে (Mali) আবিষ্কৃত হয় অজস্র প্রাচীন পুঁথি। তিমবুকতু ম্যানুস্ক্রিপ্ট (Timbuktu Manuscript) বা তিমবুকতু পুঁথি হিসাবেই পরিচিত যারা। এবার এক ক্লিকেই সেই পুঁথির দর্শন মিলবে ইন্টারনেটে।
বিশ শতকে এই পুঁথি আবিষ্কারের পর মালিকে আফ্রিকার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলেই অভিহিত করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আনুমানিক দশম শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে লেখা হয়েছিল তিমবুকতু পুঁথি। প্রাচীনকাল থেকে ইসলামিক দেশ হওয়ায় আরবিতে তো বটেই, সেইসঙ্গে সংহায়, তামাসেক ইত্যাদি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভাষাতেও লেখা হয়েছিল এই পুঁথি।
শুধু ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা রচনাকালই নয়, তিমবুকতু পুঁথির বিষয়বস্তুও রীতিমতো অবাক করার মতোই। একাধারে সেখানে যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসা শাস্ত্র, শিল্প, স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে, তেমনই রয়েছে অজস্র অনুবাদও। প্লেটো, হিপোক্রেটসের মতো গ্রিক দার্শনিকদের একাধিক কাজ, কোরানের স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ যার মধ্যে অন্যতম। অবশ্য গ্রিসের সঙ্গে প্রাচীনকালে মালির ঠিক কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে। এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ পাতার পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেছেন ঐতিহাসিকরা।
ইউনেস্কোর মতে, আফ্রিকায় ইসলাম ধর্ম প্রসার এবং সাংস্কৃতিক উন্নতির পিছনে অন্যতম অবদান রয়েছে মালি এবং তার প্রাচীন এই পুঁথিসমগ্রের। এমনকি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলটিকে ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করে জাতিসংঘের শাখা সংস্থাটি। ২০০৩ সালে কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে নেওয়া হয় বিশেষ সংরক্ষণের উদ্যোগ। তবে সেই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মালির গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন
একের পর এক বই হাতে লিখে পুঁথির স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে ফরিদপুরের কিশোর
২০১২ সালে মালির উত্তরের তিমবুকতু অঞ্চলের দখল নেয় ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী। তারপর থেকেই একের পর এক সংঘাত লেগে রয়েছে মালিতে। ধ্বংস হয়েছে তিমবুকতুর একাধিক সংগ্রহশালা অজস্র পুঁথি। বিগত ৬ বছরের চেষ্টায় মালির তিমবুকতু থেকে এইসকল প্রাচীন পুঁথি ‘পাচার’-এর ভঙ্গিতেই নিরাপদে সরিয়ে এনেছিলেন তিমবুকতু জাদুঘরের কিউরেটর তথা গ্রন্থাগরিক ডঃ আবদেল কাদের হায়দারা।
আরও পড়ুন
প্রাচীন পুঁথিতে লুকিয়ে গণিতের অজানা ইতিহাস, উত্তর খুঁজছেন বাঙালি গবেষক
তিনিই নিরাপদে সেসব পাণ্ডুলিপির সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করেন কেপটাউনে। সম্প্রতি গুগল এবং খ্যাতনামা প্রত্নতাত্ত্বিক চান্স কগেনারের সৌজন্য ডিজিটালাইজড করা হল এই পাণ্ডুলিপির একাংশ। ইতিমধ্যেই অনলাইনে দৃশ্যমান এই প্রাচীন পুঁথির ৪০ হাজার পাতা। সেইসঙ্গে চলছে অনুবাদের কাজও। আগামীতে ইংরাজি, ফরাসি কিংবা স্প্যানিশ ভাষাতেও পড়া যাবে এই পুঁথি…
Powered by Froala Editor