ভারতের ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। সবমিলিয়ে ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস এই দ্বীপরাষ্ট্রে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে মালদ্বীপের ভবিষ্যৎ। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিচ্ছে বাসস্থান সংকট। এবার এই সংকটের মোকাবিলা করতে ভাসমান শহর (Floating) তৈরির উদ্যোগ নিল মালদ্বীপ (Maldives)।
মালদ্বীপ সরকার এবং ডাচ নির্মাণ সংস্থা ‘ওয়াটারস্টুডিও’-র যৌথ উদ্যোগে টারকোয়িস লেগুনে গড়ে উঠতে চলেছে এই পরিবেশবান্ধব শহর। আবাসন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান, স্কুল এবং হাসপাতাল— নিত্যজীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিষেবায় পাওয়া যাবে এই ছোট্ট ভাসমান শহরে। ভবিষ্যতে এই শহরে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করতে পারবেন বলেই অভিমত মালদ্বীপ সরকারের। সরকারের দাবি অনুযায়ী, আগামী ৫ বছর অর্থাৎ, ২০২৭ সালের মধ্যেই নির্মাণ সম্পূর্ণ হবে এই শহরের। তবে তার আগেই ২০২৪ সাল থেকে আংশিকভাবে খুলে যাবে এই শহর। কিন্তু কীভাবে গড়ে উঠছে এই ভাসমান শহর?
রিপোর্ট জানাচ্ছে, মালদ্বীপেরই একটি শিপইয়ার্ডে পৃথক পৃথকভাবে বানানো হচ্ছে মডিউলার ইউনিট। তারপর পণ্যবাহী জাহাজে বেঁধে সেগুলিকে জড়ো করা হচ্ছে টারকোয়িস লেগুনে। সমুদ্রতলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে ষড়ভুজাকৃতি এই কাঠামোগুলিকে। তারপর সেখানেই গড়ে উঠবে বিভিন্ন স্থাপত্য। বিষুব রেখার থেকে দূরত্ব কম হওয়ায়, তাপপ্রবাহ একটি বড়ো সমস্যা মালদ্বীপে। সেই কারণে, মালদ্বীপজুড়ে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র। সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ শক্তি খরচ হয় শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্রে। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই অভিনব সমাধান খুঁজেছেন ডাচ স্থপতিরা। সমুদ্রের ৭০০ মিটার গভীরতা থেকে ঠাণ্ডা জল পাম্পের সাহায্যে তুলে আনা হবে এই ভাসমান শহরে। আর সেই জলের প্রবাহই শীতলতা প্রদান করবে শহরের আবাসনগুলিকে। পাশাপাশি গোটা শহরকে শক্তি যোগাবে সোলার প্ল্যান্ট। কাজেই পরিবেশের ওপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলবে এই শহর, তাতে সন্দেহ নেই কোনো।
তবে এই শহর নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থপতিদের কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল লজিস্টিক। যে-কারণে অন্তত এক দশক আগে এই শহরের প্রকল্প প্রকাশ করা হলেও, শুরু হতে পারেনি নির্মাণ কাজ। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়া সাধারণত বেশ সময় এবং খরচসাপেক্ষ। এই সমস্যার সমাধান করতেই টারকোয়িস লেগুনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে কয়েক মাইলের মধ্যেই অবস্থিত এই অঞ্চল। বর্তমানে এই অঞ্চলে যেতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট। তবে আগামীতে উন্নত প্রযুক্তির ভেসেলের ব্যবহারে মাত্র ১০ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এই শহরে।
সবমিলিয়ে ১১৯০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অন্যদিকে গবেষকদের অনুমান, গ্রিনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকায় ভয়াবহ বরফ গলনের কারণে চলতি শতকের মধ্যেই সমুদ্রের জলতল বাড়বে অন্ততপক্ষে সাড়ে তিন ফুট। অর্থাৎ, বলতে গেলে গোটা মালদ্বীপই প্রায় তলিয়ে যাবে সমুদ্রের জলতলের তলায়। তাই ভাসমান শহরই একমাত্র ‘উদবর্তন’-এর পথ। সংশ্লিষ্ট শহরটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে, মালেকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই আরও বেশ কিছু ভাসমান শহর নির্মাণের চিন্তাভাবনাও শুরু করে দিয়েছে মালদ্বীপ প্রশাসন। স্পষ্টত, মূল ভূখণ্ডের উপর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ কমাতেই এই উদ্যোগ মালদ্বীপের…
Powered by Froala Editor