বাংলার এককালীন রাজধানী এবং অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি নগর হল 'গৌড়' যার অবস্থান বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। অনুমান করা হয় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে এটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানকার বিভিন্ন স্থাপত্য দেখবার জন্য দেশ থেকে আজও লোকে ছুটে যায়। সেইসব ইতিহাসের টুকরো আজও ছড়িয়ে আছে এই শহরে। বহু স্থাপত্য মাথা উঁচু করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে গৌড়ের বিভিন্ন জায়গায়।
আর এই ইতিহাসের সন্ধানে গৌড়ের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মণ্ডল উনিশ বছর ধরে জেলার আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ান৷ পেশায় তিনি একজন চা এবং ঠান্ডা পানীয় বিক্রেতা। ইতিহাসপ্রসিদ্ধ গৌড়ের একটি সৌধের সামনে তাঁর ছোট্ট দোকান।
ইতিমধ্যেই তিনি প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেছেন। কয়েক বছর আগে জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় তাঁর দোকান থেকে প্রায় দশ পেটি তুলে নিয়ে দোকানে তালা দিয়ে চলে যান। বৈদ্যনাথ বাবু তাতেও দমে যাননি। ফের গৌড়ের কোনায় কোনায় খুঁজে জোগাড় করেছেন তাঁর ইতিহাস। ইচ্ছে, তাঁর নিজস্ব একটি সংগ্রহশালা হোক।
তাঁর কথায়, ‘এখানে কোনও পুকুর খোঁড়া হলে কিংবা জমি চাষ করার সময় এখনও প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শনের দেখা মেলে ৷ বৃষ্টি হলে প্রাচীনকালের তৈরি মৃৎপাত্র থেকে কাদা ধুয়ে নেমে যায় ৷ আমার চোখে পড়লে সেসব জিনিস নিয়ে আসি ৷ এভাবেই আমি সব সংগ্রহ করেছি।’
জেলা প্রশাসন সহ নবান্নতেও তিনি তাঁর সন্ধানের কথা উল্লেখ করে চিঠি পাঠিয়েছেন। উত্তর না পেয়ে যোগাযোগ করেছিলেন গৌড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও। অথচ তিনি কারও কোনো উদ্যোগ দেখতে পাননি। তাঁর দুশ্চিন্তা, তবে কি প্রাচীন বাংলার ইতিহাস এভাবেই ঘরবন্দি হয়ে থাকবে?
বৈদ্যনাথ বাবুর মতো লোকেরা আছেন বলে আজও এইসব জায়গার ইতিহাস টিকে আছে। তবে সরকারি দফতর থেকে চিঠির উত্তর কবে আসবে তার উত্তর কারও জানা নেই।