শাচানতলার উপকথা – দ্বিতীয় পর্ব

মাজারের আয়তন বেশ দীর্ঘ - প্রায় আট দশ কাঠা জায়গা জুড়ে তার বিস্তার, মেঝেতে কংক্রিটের ঢালাই। গোটা ক্ষেত্রটি প্রায় নয় দশ ফুট উঁচু ইঁটের আড়াই তিন ফুট চওড়া প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরটি সুপ্রাচীন, বট অশ্বত্থের শিকড় তাতে ফাটল ধরিয়েছে। তিন ধাপে সেটি নির্মিত। মাটি থেকে ফুট তিনেক উঁচুতে একটি ধাপ, তারপর ফুট চারেক লম্বা দ্বিতীয় ধাপ। এবং তারও শীর্ষে দুই ফুট উঁচু একটি ডিজাইন। ডিজাইন মানে বাড়ির ছাতের প্রাচীরে যেমন হাওয়া চলাচলের প্রকোষ্ঠ থাকে, তেমনি। প্রাচীরের চার কোণে চারটি গবাক্ষহীন ক্ষুদ্র ঘর - অনেকটা জেল-এর গোপন বন্দিশালা কিংবা ধ্বস্ত পরিত্যক্ত শিবমন্দিরের গর্ভ গৃহের মতো। স্থানীয় ভাষায় এই চারটি ঘর - গুহা বলেই পরিচিত। আরাজ বলল, মেলার সময় কেউ কেউ মানত রক্ষা করেন। তখন ওই ছোট্ট গুহার মধ্যে সারা রাত জেগে কৃচ্ছসাধন করেন মানুষ। মাজারের ভিতরও একটি সুপ্রাচীন মোল বৃক্ষ তার ডালপালা মেলে কবরগুলিকে ছাওয়া দিচ্ছে। 

মূল মাজারক্ষেত্রটিকে পুব-পশ্চিমে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে আর একটি প্রাচীর। তবে সেটি ঠিক প্রাচীরের মতো নয় বরং দেখতে অনেকটা প্রাচীন দালানবাড়ির বারান্দার অসংখ্য খিলান বিশিষ্ট ভগ্ন দেওয়ালের মতো। কয়েকটি খিলানের মাথা ভেঙে পড়ায় স্তম্ভগুলি স্কন্ধকাটা প্রাচীন সম্রাটের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাজারের পুব দিকের অংশে রয়েছে চার পাঁচটি কবর, আরাজ বলল, ওদিকটায় বাড়ির মেয়েদের কবর দেওয়া হত। নাহিনাবিবির কবর কি তবে ওই বড়োটা। আরজ তা বলতে পারল না। মাঝখানের বড়ো কবরটি দেখিয়ে আমাকে বলল, ওইটা শাচান পিরের।

পশ্চিম দিকের অংশ পুরুষদের। এখানে কবরের সংখ্যা অনেক বেশি, তার মধ্যে মধ্যস্থলে অবস্থিত বড়ো বেদির উপর স্থাপিত কবরটি স্বয়ং শাহ্ চাঁদ আউলিয়ার। বেদির চার প্রান্তে ইঁটের নির্মিত চারটি বিরাট স্তম্ভ, দেখে মনে হয় একসময় ওই চারটি স্তম্ভের মাথায় ছাউনি ছিল। সেগুলি এখন পরিত্যক্ত। বড়ো কবরগুলি হলুদ পাড় দেওয়া লাল রংএর চাদরে ঢাকা। আমি শাচানপিরের কবরের বেদি ছুঁয়ে নমস্কার করলাম।

মূল মাজারক্ষেত্রে প্রবেশপথের পাশে এসে বসল আরাজ। আমি বললাম, আরাজ, তুমি তো ছোটো থেকে দেখছ, শাচানপিরের কাছে যারা আসে, কী মানত নিয়ে আসে
-    সব কিছুরই।
-    যেমন?
-    অসুখ-বিসুখ হলেই বেশি। যেমন ধরেন, যেসব বউ এর বাচ্ছা হয় না, ছেলের অসুখ, রোগজ্বালা, বিছানায় পেচ্ছাপ করা, কথা ফুটতে দেরি হওয়া, গোরুর যাতে ভালো বাছুর হয়, তারপর গোরুতে দুদ দিচ্ছে না, যাতে ভালো করে দুদ দেয় - তাই মানত করল। এ ছাড়া কারো মেয়ের বিয়ে যাতে নির্বিঘ্নে হয়, কেউ ধরুন নতুন বাড়ি ফাদঁছে কি নতুন একটা গাড়ি কিনছে, বাবার থানে এসে মানত করে গেল। কারো বাড়ি থেকে কিছু চুরি হয়েছে কি একটা দামি জিনিস কিছু হারিয়ে গেছে, দরগায় চুন লেপে গেল। বাবার পুকুরে স্নান করে শিন্নি চাপিয়ে গেল - এইসব আর কি!
-    এখন আর শাচানপিরের থানে মানুষজন খুব একটা আসে না, তাই না?

আরাজ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা নিষ্প্রাণ হাসি হাসল। তারপর বলল - এখন মূলত শুক্রুবারই লোকে আসে। তাছাড়া মাঘ মাসে সাতদিন ধরে শা'চাঁদ সম্পিতি মেলা হয়, তখন অনেক লোকজন আসে। আপনি আসুন না এবারের মেলায়, দেখে যাবেন।

চলে আসার আগে আরাজকে বললাম,- শাচানপিরের কাছে মানত করে কত মানুষ ওই যে মাটির ঘোড়া দিয়েছে, আমাকে তুমি ওখান থেকে দুটো ঘোড়া দেবে, শাচানপিরের থানে আসার স্মৃতি হিসেবে আমার কাছে রাখব?

আরাজ স্তূপের থেকে দুটো ভালো দেখে ঘোড়া তুলে নিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে কিছু উচ্চারণ করে সেদুটো আমার হাতে দিল।

মাজারের বাইরে এসে দেখি সেই বৃদ্ধা তাঁর নাতিকে নিয়ে বৃক্ষতলে এখনও বসে আছেন। চঞ্চল বাচ্চাটি একটা গাছের ডাল কুড়িয়ে সেটাকে তলোয়ারের ভঙ্গিতে ধরে বুনো ঘাস-পাতাকে কুচিকুচি করছে। আমি বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বসলাম।
-    কোথা থেকে এসেছেন আপনি?
-    বললে চিনতে পারবে বাবা? এসেছি হুই আমড়া থেকে?

আমড়া এখান থেকে প্রায় সাত কিমি। সরাসরি কোনো বাসরুট নেই, কেন্দুর মাকড়কলা হয়ে হাঁটা পথে এলে পাঁচ কিমির মতো। অবশ্য কেঁদুর থেকে বাসেও আসা যায়, সে অপেক্ষা করতে হয় বিস্তর। বললাম - আমড়া আমি চিনি দিদিমা। সে তো অনেক দূর। আপনি কীসে এলেন?
-    হেঁটেই এলাম বাবা। তবে ছেলেটা আর হেঁটে ফিরতে চাইছে না। তাই বাসের জন্যে বসে আছি।
-    কে হয়? নাতি?
বৃদ্ধা ঘাড় নাড়লেন। বললাম - কী হয়েছে আপনার নাতির?
-    ওই যে, হাতে পায়ে খোশ-পাঁচড়া হচ্ছে। ও বড়ো ছোঁয়াচে রোগ। ছোটোবেলায় আমার ছেলেদেরও ওরম হত। বাবা শাচানের মাটি মাখিয়ে দিলেই ওসব ভালো হয়ে যাবে। 

শেষ বাক্যটা উচ্চারণ করে বৃদ্ধা কপালে হাত ঠেকিয়ে শাচানপিরের উদ্দেশে প্রণাম করলেন। আমি বললাম -দিদিমা, আপনি তো বহুকাল এখানে আসছেন। পিরের থানে লোকে আজও কেন মানত করে? কী গুণ আছে এখানকার মাটির? 

বৃদ্ধা আমার মুখের দিকে একটুখানি তাকিয়ে রইলেন। তারপর বুকের ওপর হাত ঠেকিয়ে বললেন - বাবা, এই অন্তর থেকে মানলেই বাবা শাচান সব ভালো করে দেয়। 

একটু থেমে বললেন, - এখানকার মাটিতে বাবা শাচানের পরশো আছে। এই মাটি মাখলে রোগজ্বালা সেরে যায়। বাবার পুকুরে চান করলে তেমনি শরীল মন পবিত্র হয়ে যায়। আর এই যে দেখছ মোল গাছ, এই গাছেও বাবা শাচানের পরশো আছে। এই গাছের ছাওয়ায় দুদণ্ড বসলে মনের রাগ জ্বালা অভিমান - সব জুড়িয়ে যায়।

মোলবৃক্ষের ডালপালা জুড়ে তখন বিচিত্র পাখিদের কলকাকলি। ছড়ানো মুড়িগুলি খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে দুটো শালিক। বাঁধানো রাস্তার পাশে তিনটি উদোম বালিকা ভুবন ভোলানো হাসিমুখে খেলায় মেতেছে। একটি সাদা বাছুরকে ওরা লতাপাতার মালা পরিয়ে সাজাচ্ছে। একটু দূরেই মাজারের প্রাচীরের পাশে দুটি ছাগল একমনে চড়ে বেড়াচ্ছে। ঠিক এই সময়টিতে কানে ভেসে এল পরিচিত নমাজের করুণ সুর। আমার মনে হল, শত শত বছরের দূরত্বে দাঁড়িয়ে বাবা শাহ্ চাঁদ পির আমার সম্মুখে এমন বর্ণ গন্ধময় অপরূপ মুহূর্তটি সৃষ্টি করলেন।

মাজারের পিছনেই শাহ্ চাঁদের পুকুর। রানা বলল, - দাদা, চল, তোকে শাচানবাবার পুকুরটা দেখিয়ে আমি। ক'বছর আগেও বুঝলি, পঞ্চায়েত থেকে পুকুরপাড়টাকে পার্কের মতো সুন্দর সাজিয়েছিল। কত কী ছিল রে! ফুলের গাছ, দোলনা, বাঁধানো চেয়ার। কী সুন্দর একটা বাঁধানো ঘাট আছে। পুকুরে তিন চারটে বোট চলত। বুঝলি, সব নষ্ট করে দিয়েছে। এখন বিকেলবেলা শুধু ছেলে মেয়েরা আসে পার্কে প্রেম করতে।

কথা বলতে বলতেই আমরা পুকুরের দক্ষিণে বাঁধানো ঘাটের পাড়ে এসে উঠলাম। পুকুরটি নেহাত ছোটো নয়। প্রায় বিঘা আড়াই জায়গা জুড়ে পুব-পশ্চিমে লম্বা হয়ে বিস্তৃত। আন্দাজ করা যায়, হাল আমলের একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সুফল এই পার্ক, বাঁধানো চমৎকার ঘাট আর টলটলে জলের পরিচ্ছন্ন ঢেউ।

এই দুপুরে পুকুরপাড়ে কেউ কোত্থাও নেই। ঘাটের একপাশে একটা সাইকেল রয়েছে আকাশমণি গাছে হেলান দিয়ে দাঁড় করানো। পুকুরের ঘাটে স্নান করে গামছা দিয়ে গা মুছছিলেন দীর্ঘদেহী এক বয়স্ক পুরুষ। লোকটির বয়স বাড়লেও স্বাস্হ্য এখনও অটুট। মেদহীন ছিপছিপে গড়ন। লুঙ্গি পরে জামা গায়ে, মাথায় একটা সাদা রুমাল বেঁধে ঘাটের এক পাশে তিনি নমাজে বসলেন। আমরা নষ্টপার্কে ঘুরতে লাগলাম আর আড় চোখে খেয়াল করছিলাম ওই মানুষটিকে।

নমাজ শেষ করে তিনি বাঁধানো সিঁড়ির একপ্রান্তে এসে বসলেন। বুক পকেট থেকে বের করে একটা বিড়ি ধরালেন। আমি পার্ক থেকে নেমে এসে সিঁড়ির অন্যপ্রান্তে - লোকটির পাশে গিয়ে বসলাম। কী দিয়ে আলাপ শুরু করা যায় বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় লোকটি বিড়ির প্যাকেটটা বের করে আমার দিকে ইশারায় বললেন - চলবে নাকি?

লোকটির গুরুগম্ভীর কণ্ঠ আর স্মার্ট অ্যাপ্রোচ আমাকেই খানিক অস্বস্তিতে ফেলে দিল। একটু অপ্রতিভ হয়েই হাতটা এগিয়ে দিলাম। লোকটা লাইটার বের করে আমার হাতে দিলেন।
-    কী করেন?
-    এই ছেলে পড়াই - মানে মাস্টারি করি আর কি!
-    থাকেন কোথায়?
-    বর্ধমানে।
-    বেড়াতে এসছেন নাকি - পিরের থানে?
-    হ্যাঁ, সেই রকমই। ছোটোবেলায় আসতাম। তারপর বড়ো হয়ে আর আসা হয়নি কোনোদিন।

মানুষটার ভাষা এখানকার স্থানীয়দের মতোই, কিন্তু তাঁর উচ্চারণে কেমন একটা সুর আছে। অনেকটা মুর্শিদাবাদের স্থানীয় মুসলমানদের উচ্চারণের মতো। জিজ্ঞাসা করলাম - আপনি কি এখানেই থাকেন?
-    হ্যাঁ, এখানেই।
-    এখানে কি বরাবর থাকেন?
-    বরাবর লয়। তবে চোদ্দো-পনেরো বচ্ছর তো হবে।
-    আগে কোথায় থাকতেন, মুর্শিদাবাদ?
-    ডোমকল। উচ্চারণ শুনে বুজলেন, লয়?
-    হ্যাঁ হ্যাঁ, মুর্শিদাবাদ থেকে কাজ করতে আসা রাজমিস্ত্রিদের মুখে এমন উচ্চারণ শুনেছি, তাই বললাম।
-    ঠিকই ধরেছেন। আমিও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। অবশ্য পনেরো বছরে আমার উচ্চারণ অনেকটা পালটে গেছে।
-    কী নাম আপনার?
-    ইসমাইল। 'হেডমিস্ত্রি ইসমাইল' বললে আশেপাশের দশটা গাঁয়ের লোক চিনবে। বারো বছর বয়স থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি, এখন বাষট্টি পার হইচি। এখন সেন্টারিংয়ের কাজই বেশি করি।

বলতে বলতেই তাঁর পকেট থেকে মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠল। ইসমাইল ফোন ধরে হ্যালো বললেন। কোথাও কোনো বাড়ির ছাতের সেন্টারিং করা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ইসমাইল বললেন, ডিসেম্বরের দশ তারিখের আগে উনি যেতে পারবেন না। দুদিন হল কোন শিবমন্দিরের চূড়া সেন্টারিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে, সেটা শেষ করতে আর দিন তিনেক লাগবে, তার পর উনি যাবেন।

ফোন রেখে ইসমাইল আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, - উঠতে হবে, বুজলেন।
-    কোন মন্দির তৈরির কথা বলছিলেন না? কোথায় সেটা?
-    এই তো সামনেই, মির্জাপুর। শিবমন্দির হচ্ছে। চেনেন নাকি মির্জাপুর?

রানা বলল, ও মির্জাপুরের শিবমন্দির চেনে। আগে কখন নাকি গেছে।

পুরোনো মন্দির সাড়াই করা, মানে যাকে বলে প্রাচীন স্থাপত্যের রেস্টোরেশন। বুঝলাম ইসমাইল একধারে অত্যন্ত দক্ষ রাজমিস্ত্রি এবং শিল্পী। বললাম - আপনি কি পুরোনো মন্দির সাড়াই করার কাজই বেশি করেন?
-    যখন যেমন কাজ আসে - ঘরবাড়ি বিল্ডিং থেকে লতুন মন্দির - সবই করতে হয়। আর শোনেন, এই এলাকার দশ বিশটা গ্রামে যেসব পুরোনো মন্দির সাড়াই এর কাজ হয়েছে, সেসব আমার করা। কেঁদুর, নন্দনপুর, আমরা, মির্জাপুর, শন্তিনাথ তলা, বেলুন, নাগাতেঁতুল - এসব গাঁয়ে যেসব নতুন ও পুরোনো মন্দিরের কাজ হয়েছে, সব আমার করা। একাজ সব মিস্ত্রির দ্বারা হয় না। শাচানপিরের দোয়ায় ইসমাইলের কাজের অভাব নেই। ...দাদা, আসি তাইলে?

সাইকেল চেপে ইসমাইল দ্রুত চলে গেলেন মির্জাপুরের উদ্দেশে। রানা বলল, - চল দাদা, দেড়টা বাজে।

ফেরার আগে রানার কী মনে হল, ও আর একবার শাচানপিরের মাজারে ঢুকল। আবার একটু পরেই বেরিয়ে এল। বললাম, কী রে কিছু ভুলে গিয়েছিলি নাকি।
-    না রে, আমার মেয়ের জন্যে শাচানবাবার কাছে একটা মানত করে এলাম।

বাইকে ফেরার পথে একলাখি ছাড়িয়ে সবে একটু এগিয়েছি, ডানপাশের একটা গ্রাম দেখিয়ে রানা বলল, -দাদা, ওইটা মির্জাপুর।

মির্জাপুর গ্রামের দিকে যেতে মেন রোড থেকে রাস্তা যেখানটায় ভেঙে গেছে, আমি ওকে বাইক ঘোরাতে বললাম। গ্রামের রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে ডানদিকে বাঁক নিয়ে আরও একটু এগিয়ে রানা বাইক থামাল। বলল, - ওই দ্যাখ শিবমন্দির। 

তাকিয়ে দেখি, মন্দিরের চারদিকে বাঁশ বাঁধা। চূড়া ঢালাই হবে, কাঠের পাটাতনে মোড়া হচ্ছে চারধার। নিচে লোহার খাঁচা সাজানোর কাজ চলছে। সামনে তাকিয়ে দেখি ইসমাইল চূড়ার দিকে তাকিয়ে বিড়ি ফুঁকছেন আর অন্যদের কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন। আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে আমাদের দেখতে পেলেন, বললেন :
-    আপনারা? দেখতে এলেন বুঝি? তা ভালোই করেছেন। 

কথাটা বলেই ইসমাইল মুখের বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে বুকে হাত ঠেকিয়ে একটা প্রণাম করলেন। তারপর বাঁশের মই বেয়ে তরতর করে উঠে গেলেন মন্দিরের চূড়ায়। উপরে দাঁড়িয়ে কোমরে গোঁজা হাতুড়িটা হাতে নিয়ে পাটাতন ঠিক করতে লাগলেন।

এই শীতের দুপুরে মন্দিরশীর্ষে দাঁড়ানো ওই দীর্ঘদেহী ইসমাইলের বুক ছুঁয়ে বাঁকা রোদ ঠিকরে পড়ছে আমার চোখে-মুখে। 

ঠিক তক্ষুনি আমার মনে পড়ল, আজ ছয় ডিসেম্বর - ভারতবর্ষের ইতিহাসে দিনটি ঐতিহাসিক। আজ থেকে ঠিক আঠাশ বছর আগে, অযোধ্যার এক প্রাচীন মসজিদের বুকে দাঁড়িয়ে একদল ধর্মোন্মাদ জনতা ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল। আজ তারই উদযাপনের দিন।

অলঙ্করণ - ছন্দক গুহ

Powered by Froala Editor