হাসপাতালেই ছেড়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আজ 'সেলিব্রিটি' গ্যাবে

হ্যানহার্ট সিনড্রোম নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। জন্মের সময় থেকেই ছিল না হাত-পা। আর সেই প্রতিবন্ধকতাই যেন তাঁকে শত্রু করে তুলেছিল নিজের অভিভাবকদের। শুধুমাত্র বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার জন্যই, তাঁকে হাসপাতালে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। বোধশক্তি তৈরি হওয়ার আগে থেকেই যেন শুরু হয়ে গিয়েছিল অস্তিত্বের লড়াই। না, সেই যুদ্ধে হারেননি তিনি। বরং, আজ তিনি ইন্টারনেটের অন্যতম সেনসেশন। জনপ্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট।

গ্যাবে অ্যাডামস উইটলি। মেকআপ আর্টওয়ার্ক নিয়ে ধারাবাহিকভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্য নতুন পন্থার হদিশ দিয়ে চলেছেন ২২ বছরের গ্যাবে। একইসঙ্গে চলছে ইন্টারনেটে মেকআপের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ। টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। 

মার্কিন নাগরিক হলেও গ্যাবের জন্ম ব্রাজিলে। সদ্যজাত গ্যাবেকে হাসপাতালেই পরিত্যক্ত করে গিয়েছিলেন তাঁর বায়োলজিক্যাল বাবা-মা। জীবনের একটা বড়ো অংশ কেটেছে হাসপাতালের নার্সদের পরিচর্যাতেই। তারপর মাস নয়েক বয়সে হঠাৎ করেই পাল্টে যায় তাঁর জীবন। ব্রাজিলের এক মুদির দোকানে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীর থেকেই গ্যাবের কথা জানতে পেরেছিলেন এক প্রবাসী মার্কিন দম্পতি। ছোট্ট শিশুর অসহায়তার কথা শুনে এগিয়ে আসেন তাঁরাই। দত্তক নেন গ্যাবেকে। তাঁদের পরিচর্যাতেই নতুন জীবন পায় সদ্যোজাত। থেরাপি থেকে শুরু করে পড়াশোনা— নিজের সন্তান না হলেও গ্যাবের পরিচর্যায় কোনোরকম খামতি রাখেননি ওই মার্কিন দম্পতি। 

ছোটো থেকেই মেকআপ নিয়ে গ্যাবের আগ্রহ ছিল প্রবল। বছর কয়েক আগে পড়াশোনার পাট শেষ করার পর মেকআপ আর্টকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন তিনি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে আজ রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়া তারকা তিনি। অবশ্য এসবের পর এখনও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্যদিন তাঁকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে বুলিং-এর। তবে হাল ছাড়তে নারাজ গ্যাবে।

শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালই নয়, গ্যাবের হাত ধরে উড়েছে রামধনু পতাকাও। বছর কয়েক আগে রূপান্তরকামী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। খাতায়-কলমে এখন তাঁর পরিচয় পুরুষ। রয়েছে স্বামীও। এককথায় জীবনের সমস্ত বাধাকেই পেরিয়ে গিয়ে এভাবেই গ্যাবে প্রতিদিন লড়ে চলেছেন বৈষম্য এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে। হয়ে উঠছেন লক্ষ লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা…

Powered by Froala Editor

More From Author See More