দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হওয়ার গল্প তো আমরা সবাই জানি। মহিলা বাই পারধির গল্প অনেকটা সেরকমই। তবে এই গল্পটা কোনো একজন ব্যক্তিমানুষের গল্প নয়, বরং পারধি জনগোষ্ঠীরই একটা চিত্র তুলে আনে। যে গোষ্ঠী পরিচিত শিকারের জন্য, সেখান থেকেই মহিলা পারধি উঠে এসেছেন। নিজের বৃত্তের মধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন শিক্ষার আলো।
অবশ্য কাজটি এখনও খুব একটা সহজসাধ্য নয় তাঁর পক্ষে। মধ্যপ্রদেশের পারধি গোষ্ঠীর এই অপরাধ প্রবণতার কাহিনি আজকের নয়, বহুদিনের। ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট ১৮৭১ অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীকে ক্রিমিনাল ট্রাইব হিসেবে বলা হয়েছিল। সেটা অবশ্য অনেক আগের কথা। কিন্তু আজও সেই ‘প্রথা’ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এরা। আগে দস্যুবৃত্তি করলেও, এখন শিকারের সঙ্গে যুক্ত তারা। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে বহু বাঘ মারা যায়। ২০০৭ সালে একই ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে, তবে এবার বাঘের জায়গায় সিংহ। এই প্রতিটা ক্ষেত্রে চোরাশিকারের অভিযোগ স্পষ্ট, আর তার তির পারধিদের দিকেই।
সেখান থেকেই নিজের লড়াইটা শুরু করলেন মহিলা বাই। তাঁদের গোষ্ঠীর মধ্যে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি এই শিকার, দস্যুবৃত্তি ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্যদিকে গিয়েছেন। গিয়েছেন শিক্ষার দিকে, আলোর দিকে। শুধু তাই নয়, পারধি গোষ্ঠীর অন্যান্যদেরও স্কুলমুখী করার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। ছোটো ছোটো শিশুরা যাতে এই আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, যাতে পরে আর চোরাশিকার করে অপরাধীর জীবন কাটাতে তাদের না হয়। সবসময় যে সফল হন, তা নয়। তবে চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। তাঁরই একান্ত চেষ্টার ফলেই বোধহয়, গত ১০ বছরের মধ্যে আস্তে আস্তে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। একটু একটু করে স্কুলে যাচ্ছে একটা প্রজন্ম। এখন উজ্জ্বল ভবিষ্যতেরই স্বপ্ন দেখছেন মহিলা বাই। তাঁর আপন পারধিরা এই অপরাধ বাদ দিয়ে দেশ বিদেশে পড়াশোনা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক, এটাই এখন তাঁর লক্ষ্য।
চিত্র - সংগৃহীত