দু’দশকে ১১ গুণ সংখ্যাবৃদ্ধি, শকুন সংরক্ষণে লড়ছে মহারাষ্ট্রের গ্রাম

মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার ছোট্ট গ্রাম চিরগাঁও। কিছুদিন আগেও এই গ্রামের খোঁজ রাখতেন না কেউ। কিন্তু সম্প্রতি সারা দেশের পরিবেশ সংরক্ষকদের কাছে আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে এই গ্রাম। বলা ভালো, এই গ্রামের শকুনের বসতি। সারা দেশ থেকে যখন শকুনের বসতি মুছে যাচ্ছে, তখন চিরগাঁওতে ক্রমশ বাড়ছে সংখ্যা। গত ২০ বছরে সংখ্যাটা বেড়েছে ১১ গুণেরও বেশি।

২০০০ সালের গোড়ার দিকে চিরগাঁও অঞ্চলে মাত্র ২২টি শকুনের সন্ধান পেয়েছিলেন বনদপ্তরের কর্মীরা। আর তার পর থেকেই শুরু হল সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। কিন্তু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া মানে শুধুই বনদপ্তরের আধিকারকদের প্রথাগত কিছু কাজ নয়। তাঁরা বুঝেছিলেন, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে না এগোলে কোনোদিনই শকুনের বসতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। শুরু হল সচেতনতামূলক প্রচার। আর কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের মানুষরা এগিয়ে এলেন সংরক্ষণের কাজে। এতদিন নানা গাছ কেটে ফেলে তাঁরাই শকুনের বাসাগুলি নষ্ট করেছেন। এবার তাদের জন্য আলাদা বাসা তৈরি করে দেওয়ার জায়গাও করে দিলেন তাঁরা। সেইসঙ্গে নতুন করে বৃক্ষরোপণের কাজও শুরু হল।

কিন্তু শুধু বাসা তৈরি করলেই হবে না। ইতিমধ্যে সংখ্যাটা যেভাবে কমে এসেছে, তাতে স্বাভাবিকভাবে তাদের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক তারের জন্য অনেক সময়েই আহত হয় শকুনের দল। আহত শকুনদের চিকিৎসার দায়িত্বও নিলেন গ্রামবাসীরা। বনদপ্তরের কর্মীরা শুধু তাঁদের বুঝিয়ে দিতেন, কীভাবে সুশ্রুষা করতে হবে আহত পাখিদের। বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে তাদের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রাখাটা ভীষণ জরুরি। গ্রামবাসীরা সবটাই সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। আর তার ফলে ২০২১ সালে সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ২৪৯-এ।

শকুন, এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে সংকটে থাকা পাখিদের একটি। ১৯৮০ সাল নাগাদ সারা দেশে শকুনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি। এই ৪০ বছরে সেই সংখ্যাটা নেমে এসেছে প্রায় ০.৪৭ শতাংশে। এর জন্য ডাইক্লোফেনাকের মতো গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সম্প্রতি। এছাড়াও সবচেয়ে বড়ো সমস্যা শকুনের বাসস্থান। ক্রমাগত বৃক্ষছেদনের ফলে আজ তাদের আর থাকার কোনো জায়গাই নেই। এক সময় দেশে ৯টি প্রজাতির শকুনের দেখা পাওয়া যেত। এখন মাত্র ৩টি প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়। এদেরও যদি বাঁচানো না যায়, তাহলে যে বাস্তুতন্ত্রের একটা বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে সে-কথা বলাই বাহুল্য। চিরগাঁও তাই আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে সারা দেশের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এভাবেই কি দেশের অন্যান্য প্রান্তেও সামাজিক উদ্যোগ গড়ে তোলা সম্ভব নয়? প্রশাসনিক তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সহযোগিতাও।

আরও পড়ুন
ভারতে বিলুপ্তপ্রায় শকুন, বিক্রি থামেনি মৃত্যুর জন্য দায়ী ‘বিষে’র

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শকুনের মৃত্যুর জন্য দায়ী সমস্ত ওষুধ নিষিদ্ধ বাংলাদেশে, পৃথিবীতে এই প্রথম