“১৯৭১-এ ‘হিন্দুস্থান রেকর্ডস’ থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের গান’ এবং ‘বিক্ষুব্ধ বাংলা’— এই শিরোনামে দুটি রেকর্ডস বেরিয়েছিল। সেইসময় বাংলাদেশ মানে পূর্ব পাকিস্থান থেকে বহু শিল্পী আশ্রয় নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। অনেকে আশ্রয় নেন হিন্দুস্থান রেকর্ডসের অক্রুর দত্ত লেনের বিল্ডিং-এ। পশ্চিমবাংলার গীতিকার, গায়ক, সুরকার এবং পূর্ববঙ্গ থেকে আশ্রয় নেওয়া শিল্পীরা একজোট হয়েই এই অ্যালবাম দুটি করেছিলেন”, বলছিলেন সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক ও সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক সাহানা বাজপেয়ী (Sahana Bajpaie)।
আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আর সেই উপলক্ষেই সমস্ত ডিজিটাল অডিও প্ল্যাটফর্মে আজ প্রকাশ পেল নতুন গানের অ্যালবাম ‘ম্যাগপাই-রবিন’স সংবুক’ (Magpie-Robin’s Songbook)— ‘দোয়েল পাখির গানের খাতা’। সাহানা বাজপেয়ী এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর দুই সহ-শিক্ষক সোমনাথ বটব্যাল এবং জর্জি পোপের মস্তিষ্কপ্রসূত এই বিশেষ অ্যালবামটি।
আসলে এই অ্যালবামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মুক্তযুদ্ধ ও সেইসময়ের ইতিহাস। কথায়-কথায় সাহানা জানালেন, “১৯৭১ সালে দুই বাংলা এক হয়ে যে দুটো অ্যালবাম বানিয়েছিল, সেইটাই আমরা রি-ইম্যাজিন করার চেষ্টা করেছি। হিন্দুস্থান রেকর্ডসের কর্ণধার শোভনলাল সাহা ’৭১-এ পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন এই দুটো অ্যালবামের। উনি এই গানগুলো ওঁদের আর্কাইভ থেকে আমাদের পাঠিয়েছিলেন। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি গান বেছে নিয়ে আমরা করেছি এই অ্যালবামটি।”
সবমিলিয়ে ‘দোয়েল পাখির গানের খাতা’-য় জায়গা পেয়েছে ৭টি গান। ১৯৭১-এর মতোই দুই বাংলার মধ্যে নতুন করে সেতু বেঁধেছে এই অ্যালবামটিও। গান গেয়েছেন বাংলাদেশের শিল্পী সোহিনী আলম, আসির আরমান এবং রিপন সরকার ওরফে বগা তালেব। পশ্চিমবাংলার শিল্পী হিসাবে এই অ্যালবামে উপস্থিত সাহানা বাজপেয়ী ও স্যমন্তক সিনহা। তাছাড়াও এই অ্যালবামে একটি গান রয়েছে খুদে সঙ্গীতশিল্পীদের কণ্ঠে। তারা সকলেই পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশি সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলের ম্যানারফিল্ড স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। অন্যদিকে এই অ্যালবামের সুরসজ্জার নেপথ্যে স্যমন্তক সিনহা এবং লন্ডনবাসী অলিভার উইকস।
এখানেই শেষ নয়। আগামী ৩১ মার্চ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের আমন্ত্রণে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন সাহানা বাজপেয়ী, জর্জি পোপ, সোমনাথ বটব্যাল। থাকবেন স্যমন্তক সিনহা ও বাংলাদেশের শিল্পী রিপন সরকার। সদ্য-প্রকাশিত অ্যালবামটির প্রেক্ষিতে গানে, কথায়-আলোচনায় উঠে আসবে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের পরবর্তী ৫০ বছরের যাত্রাপথের কাহিনি।
সবমিলিয়ে বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক এক অধ্যায়কে, তার জানা-অজানা, হারিয়ে যেতে বসা ইতিহাসকে, সে-যুগের শিল্পকে নতুন মোড়কে সাধারণের কাছে তুলে ধরছে ‘দোয়েল পাখির গানের খাতা’। নতুন করে এক সূত্রে বাঁধছে দুই বাংলাকে।
Powered by Froala Editor