“রাজনৈতিক নেতারা তো তাদের ভোট উৎসবের নামে রাজ্যজুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট বাড়িয়ে দিলেন। এখন মানুষের জীবন থেকে বাকি সব উৎসবই হারিয়ে গেল। উৎসব না হোক, ম্যাজিক হলে ক্ষতি কী? আর সেই ম্যাজিক যেন এই সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে, সেটাই মাথায় রাখতে হবে।” বলছিলেন বেহালা নিবাসী ম্যাজিশিয়ান জি মুখার্জি। করোনা অতিমারীর মধ্যে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে তিনি ম্যাজিকের সরঞ্জাম নিয়েই বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। লকডাউনের নিয়ম মেনে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে সমস্ত বাজার-হাট। এই সময়েই নানা ছোট-বড়ো বাজারে ঘুরে ঘুরে তাঁর মানুষকে সচেতন করছেন তিনি।
শুরুটা হয়েছিল গতবছর দুর্গাপুজোর সময়। গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়, ওরফে ম্যাজিশিয়ান জি মুখার্জি বলছিলেন, “নানা জটিলতার পর মণ্ডপের বাইরে থেকে প্রতিমা দেখার অনুমতি দিল সরকার। কিন্তু তাতেও তো ভিড় কমার কথা নয়। তাই মানুষকে নিজের সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। শহরের প্রায় সমস্ত পুজো মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে ম্যাজিক দেখাতে দেখাতে এই কথাগুলোই বলেছি আমি।” কখনও কাগজের চিরকুটকে ড্রপলেটের রূপকে ব্যবহার করে দেখিয়েছেন ভাইরাস কীভাবে এক ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও আবার করোনা ভাইরাসের মতো দেখতে একটি বলকে ভ্যানিস করে দিচ্ছেন জাদু স্যানিটাইজার দিয়ে। অদ্ভুত সব খেলা মানুষকে আকর্ষণ করেছে। সেইসঙ্গে দিয়েছে সুস্থ থাকার শিক্ষাও।
পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে ম্যাজিশিয়ান জি মন দিয়েছিলেন নিজের প্রদর্শশালা তৈরির কাজে। বিগত ১০ বছর ধরে পেশাদার ম্যাজিশিয়ান হিসাবে দেশের নানা প্রান্তে ম্যাজিক দেখিয়েছেন তিনি। এবার নানা ধরণের ও নানা ঘরানার ম্যাজিক নিয়ে একটি প্রদর্শশালা তৈরি করাই তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু আবারও দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে পুনরায় রাস্তায় নামলেন তিনি। গত রবিবার বেরিয়ে পড়লেন নতুন পোশাকে। মাথার উপরে সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে নানা রঙের স্পঞ্জের বল। ফলে সামাজিক দূরত্ববিধি ভেঙে কাছে এসে পড়লেই খেতে হবে বলের আঘাত। বেহালার পার্শ্ববর্তী পুরাতন বাজার, নতুন বাজার, ছোটো বাজারে ইতিমধ্যে তাঁর এই অভিনব প্রচার নিয়ে হাজির হয়েছেন ম্যাজিশিয়ান জি। এরপর শহরের অন্যান্য বাজারেও পৌঁছে যেতে চান তিনি। তবে তাঁর কথায়, “এবারে মানুষ এমনিই অনেক বেশি সচেতন। খুব বেশি মানুষকে মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোতে দেখছি না আমি। বেশিরভাগ লোকই দুটো করে মাস্ক পরছেন।” তবু এই মহামারী রুখতে সচেতনতাই তো শেষ ভরসা। আর তার প্রচার যদি এমন অভিনব হয়, তাহলে মানুষের মনে তা আলাদা দাগ কাটবেই।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চলমান ট্রামেই জাদুর প্রদর্শনী, শীঘ্রই পথে নামবে ম্যাজিক ট্রাম