৬৮ বছর আগে মৃতার কোষ আজও প্রাণ বাঁচায় অজস্র মানুষের

১৯৫০ সালে জোনাস স্যালক তৈরি করলেন প্রথম পোলিও প্রতিষেধক। কিন্তু আদৌ সেই প্রতিষেধক কাজ করবে তো? পরীক্ষা করে দেখা খুব সহজ কাজ নয়। পোলিওর মতো মারাত্মক রোগ নিয়ে ছেলেখেলা করার জায়গা নেই। তাই জীবিত মানুষের উপর পরীক্ষা করার আগে পরীক্ষাগারে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আর সেই পরীক্ষার জন্যই ১৯৫৩ সালে স্যালকের হাতে এল বিশেষ ধরনের কিছু কোষ। মানব শরীরের কোষ। তবে তার বিভাজনের হার অনেক বেশি। আর তাই এইসমস্ত কোষের উপর পরীক্ষা করে দীর্ঘ পরিসংখ্যান তৈরি করা যায়। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা সফল হল। ১৯৫৭ সালে শুরু হল পোলিও প্রতিষেধকের প্রয়োগ। আর সেই সময় থেকেই ভাইরাস গবেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠল ‘হেলা সেলস’ (HeLa Cells)।

হেলা সেল বা হেলা কোষ মানবকোষের প্রথম কৃত্রিম ক্লোন। এই নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক মহিলার নাম। তিনি হেনরিয়েটা ল্যাক্স (Henrietta Lacks)। ১৯৫১ সালে গলায় ক্যানসার নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বালটিমোরের জন হপকিন্স হাসপাতালে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্যানসারেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। যদিও ল্যাক্সের ক্যানসার খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়েছিল। কিন্তু তাও ৫০-এর দশকে ক্যানসারে মৃত্যু একেবারেই অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বিতর্ক শুরু হল অন্য কারণে। বলা ভালো, পোলিও প্রতিষেধকের পরীক্ষাটিকে ঘিরেই। ১৯৫৩ সালে হেনরিয়েটা ল্যাক্সের সংক্রমিত কোষ থেকে ক্লোন তৈরি করলেন থিওডোর পাক ও ডেভিড মার্কাস নামের দুই চিকিৎসক। আর তখনই জানা যায়, তাঁর কোষ সংগ্রহের বিষয়ে ল্যাক্সের কাছ থেকে কোনো অনুমতিই নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিবেশনে হেনরিয়েটা ল্যাক্সের সেই কাহিনিই নতুন করে তুলে আনলেন সংস্থার কর্ণধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস। চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদানে জন্য তিনি এবছর মরণোত্তর বেস্টোস পুরস্কার তুলে দিলেন হেনরিয়েটা ল্যাক্সের নামেই। রোগীকে না জানিয়ে তাঁর দেহকোষ সংগ্রহের বিপক্ষে সেদিন স্বর তুলেছিলেন বহু মানবাধিকার কর্মী। আর সেই বক্তব্যকেই পুরোপুরি সমর্থন জানালেন টেড্রোস। ল্যাক্স ছিলেন আমেরিকার একজন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক। আর সেই কারণেই তাঁকে এই ধরনের বৈষম্যের মুখে পড়তে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।

শুধুই পোলিও প্রতিষেধক নয়, পরবর্তীকালে ভাইরাস ও ক্যানসার সংক্রান্ত অন্তত ৭৫ হাজার গবেষণায় কাজে লেগেছে হেলা কোষ। এমনকি করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক পরীক্ষার সময়েও হেলা কোষ ব্যবহার করা হয়েছে। টেড্রোসের মতে, বর্ণবৈষম্য শুধু ল্যাক্সের শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেই কোষ থেকে যে গবেষণাগুলি সফল হয়েছে, তার সুফলও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাদা চামড়ার মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। তবে করোনা প্রতিষেধকের সুফল যাতে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়, সেই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। আর আগামীদিনে এই সমস্ত গবেষণার সুফল সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তবেই ল্যাক্সের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত হবে, এমনটাই জানিয়েছেন টেড্রোস।

আরও পড়ুন
ব্যাঙের কোষ দিয়ে তৈরি হল পৃথিবীর প্রথম ‘জীবন্ত’ রোবট

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কোষবিভাজন থামাবে যন্ত্র, ক্যানসার রোধে যুগান্তকারী আবিষ্কার ভারতীয় বিজ্ঞানীর

Latest News See More