হাতের মুঠোর মধ্যে থেকে ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে বল। কখনো বা ৫০০ টাকার নোট চোখের সামনেই বদল যাচ্ছে ডলারে। ম্যাজিক। পুরোটাই একটা শিল্প। আর এবার এই বিস্ময়কর শিল্পের প্রদর্শনী দেখার সুযোগ মিলবে ট্রামে চড়তে-চড়তেই। হ্যাঁ, খোদ ট্রামের মধ্যেই ম্যাজিক শো। রাজ্য পরিবহন দপ্তর এবং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েশন (ফিমা)-এর যৌথ উদ্যোগে হতে চলেছে এমনটাই।
আগামী ৬ তারিখ অর্থাৎ ৬ মার্চ থেকেই শুরু হতে চলেছে ‘ম্যাজিকাল ট্রাম’ নামাঙ্কিত এই অনুষ্ঠান। তারপর থেকে প্রতি শনিবার এবং রবিবার স্বাদ নেওয়া যাবে এই অনুষ্ঠানের। ২ ঘণ্টার এই ‘ম্যাজিকাল’ সফরের জন্য টিকিটের দাম মাত্র ৮০ টাকা। অনুর্ধ্ব আঠারো বছর বয়সীদের জন্য টিকিটের মূল্য অর্ধেক।
এসপ্ল্যানেড থেকে শুরু করে বউবাজার, কলেজ স্ট্রিট, হাতিবাগান ছুঁয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত যাবে এই ট্রাম। ফিরতি পথে এই ট্রাম গড়িয়াহাট ট্রামওয়ার্ল্ড, পার্ক সার্কাস, নোনাপুকুর, ওয়েলিংটন হয়ে এসে থামবে এসপ্ল্যানেডে। প্রতি সপ্তাহান্তে দুপুর ১টার সময় ছাড়বে ম্যাজিকাল ট্রাম। তবে শুধু ম্যাজিক শো-ই নয়। শিশুদের ম্যাজিকের প্রশিক্ষণও দেবেন দক্ষ জাদুশিল্পীরা। তাছাড়া ট্রাম ওয়ার্ল্ডেও দুপুর ৩টে থেকে ৬টা পর্যন্ত দেখা যাবে ম্যাজিক শো।
ট্রামের পাশাপাশি ফেরিতেও দেখা যাবে ম্যাজিকের প্রদর্শনী ‘ম্যাজিক অন ওয়াটার’। কিছুদিন আগেই ডব্লুবিটিসি শুরু করেছিল ইউরোপিয়ান সেটলমেন্ট বোট রাইড। ফি শনিবার ও রবিবার সকাল ১০টায় মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ছাড়ে সেই ফেরি। ঘুরিয়ে আনে ১১ ঘণ্টার গঙ্গাসফরে। এবার এই সফরের মাঝে দুটি দেড় ঘণ্টার বিরতিতে সেরামপুর ও চন্দননগরে দেখা যাবে ম্যাজিকের অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন
এবার চলন্ত ট্রামেই শিল্প প্রদর্শনী, নবাগত শিল্পীদের পাশে রাজ্যের পরিবহন সংস্থা
সব মিলিয়ে কলকাতার মুকুটে জুড়ছে এক নতুন অভিনবত্বের পালক। এ প্রসঙ্গে রাজ্য পরিবহন দপ্তরের ডিরেক্টর রজনভির সিং কাপুর জানান, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ট্রাম এবং ফেরির জনপ্রিয়তা গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ। অন্যদিকে ফিমার প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “যাদু প্রাচীন ভারতের এক শিল্পকলা। তবে পথযাত্রীদের মধ্যে, বৃহত্তর অর্থে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাদুর এই রেশ ছড়িয়ে দিতেই ফিমার এই উদ্যোগ। আর এই নতুন যুগে পথ চলার সূচনা করতে মুখিয়ে রয়েছে ফিমা”।
আরও পড়ুন
ছোটোদের জন্য কলকাতার পথে ট্রাম-লাইব্রেরি
“ইট, কাঠ আর এই ধোঁয়ার শহরে দু’দণ্ড ফুরসত নেই মানুষের জীবনে। এই দমবন্ধতাকে কাটিয়ে তুলে দৈনন্দিন জীবনে খুশির রেশ আনবে ম্যাজিক। সেটাই লক্ষ্য ফিমার। একমাত্র ম্যাজিকই পারে মুহূর্তদের অসাধারণ করে তুলতে”, কথায় কথায় জানালেন খ্যাতনামা হ্যান্ড শ্যাডোগ্রাফার ও জাদুকর অমর সেন।
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের সীমাহীন মিথ্যাই কি তাঁর পতনের মূলে?
সর্বভারতীয় সংস্থা ফিমার সদর দপ্তর রয়েছে কলকাতাতেই। সেখানে রয়েছেন প্রায় তিন হাজারের মতো দক্ষ জাদুশিল্পী। ২০১৯ সাল থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কলকাতার মোহরকুঞ্জে প্রতিবছর একটি ম্যাজিকের মেলা আয়োজন করে আসছে ফিমা। অভিনব সেই উদ্যোগের পর আরও এক ধাপ এগিয়েই যেন নতুন এই পরিকল্পনা। কলকাতার ঐতিহ্য যেমন ট্রাম, তেমন জাদুও। তবে এই দুইয়ের মধ্যে যে কোনো সেতু হতে পারে, তা ভাবা গিয়েছিল কি এর আগে? ১৪৮ বছরের সেই নস্টালজিয়ার সঙ্গে ম্যাজিকের ঐতিহাসিক মিশ্রণটাই এবার সত্যি করে দেখালেন ফিমা ও ডব্লুবিটিসি’র কর্মকর্তারা…
Powered by Froala Editor