ক্যানসারাক্রান্ত ম্যাজিশিয়ান, চিকিৎসার খরচ জোগাতে বিশেষ ম্যাজিক প্রদর্শনী সতীর্থদের

“ম্যাজিশিয়ানরাও তো শিল্পী। দীর্ঘদিন পরিশ্রম করার পর তাঁর পরিচিতি হয়। শুধুমাত্র অর্থের জন্য একজন ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখান না। দর্শকদের হাততালি পাওয়ার জন্যই তিনি ম্যাজিক করেন। আর পাঁচটা মানুষের থেকে তাঁর মূল্যবোধটা আলাদা। এমন একজন মানুষ যখন সাহায্যের আবেদন করেন, তখন অবশ্যই তাঁর পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।”

বলছিলেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েশন (ফিমা)-র অন্যতম সদস্য এবং জাদুকর স্যান্ড কৌশিক। আগামীকাল কলকাতার শিশির মঞ্চে আয়োজিত হতে চলেছে এক বিশেষ জাদু প্রদর্শনী। ম্যাজিক ছাড়াও সেখানে থাকছে স্যান্ড আর্ট, হ্যান্ড শ্যাডোগ্রাফি-সহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় শিল্প। কিন্তু আর পাঁচটা ম্যাজিক শো-এর থেকে এই প্রদর্শনী খানিকটা ভিন্ন। শুধুমাত্র দর্শকদের বিনোদনের স্বাদ দিতে এই ম্যাজিক শো নয়। বরং, এক বাঙালি জাদুকরের চিকিৎসার জন্য তহবিল করতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েশনের জাদুকররা।

বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। কলকাতা তথা বাংলার সমকালীন জাদুকরদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ‘ফিমা’-র সদস্য এবং হাওড়া ম্যাজিক সার্কেলের প্রেসিডেন্ট-ও বটে। সম্প্রতি তাঁর শরীরে ধরা পড়েছে দুরারোগ্য ক্যানসার। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর সেই তহবিল গড়ে তুলতেই এই ম্যাজিক শো-এর আয়োজন করেছেন তাঁর সতীর্থ তথা ফিমা-র সদস্যরা। এই প্রদর্শনী থেকে উপার্জিত সমস্ত অর্থই ব্যবহৃত হবে জাদুকর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর চিকিৎসায়। এমন উদ্যোগ যে সচরাচর দেখা যায় না কলকাতার বুকে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। 


তবে শুধু ম্যাজিশিয়ান বললে বোধ হয় কম বলা হয় তাঁর সম্পর্কে। ম্যাজিকের দুনিয়ায় তাঁর পথচলা শুরু হয়েছিল একদম তরুণ বয়সে। বিগত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলার জাদুশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন তিনি। “বিশ্বজিৎবাবু নিজে একট ম্যাজিক সংগঠন চালান। তাছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি”, জানালেন স্যান্ড কৌশিক। এসবের বাইরে প্রান্তিক জাদুবিদ্যা নিয়েও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন জাদুকর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। বিবাহ করেননি, এক কথায় বলতে গেলে এই ম্যাজিকই তাঁর সংসার। আর সেই বাংলার তরুণ-প্রবীণ-মধ্যবয়স্ক সমস্ত ম্যাজিশিয়ানই তাঁর পরিবারের সদস্য।

“আমার সন্তানের যদি কোনো বিপদ হয়, তাহলে তো অবশ্যই তাঁর পাশে আমরা দাঁড়াই। এক্ষেত্রেও তাই। ফিমার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করে কাউকেই কোনোদিন ফিরতে হয়নি। একইভাবে বিশ্বজিৎবাবুর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি আমরা”, বলছিলেন কৌশিক।

ইতিমধ্যেই এই প্রদর্শনীর বিরোধিতায় নেমেছেন অনেকেই। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁর পাশে দাঁড়ানো? প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ম্যাজিশিয়ানদের একাংশ। কিন্তু আসন্ন বিপদের সম্ভাবনা জেনেও কি চুপ করে বসে থাকা যায়? থাকতেও পারেননি ফিমার সদস্যরা। ক্যানসারের সঙ্গে এক অসম লড়াইয়ে নেমেছেন বিশ্বজিৎবাবুর বন্ধু ম্যাজিশিয়ানরা। তাঁরা আশাবাদী, জয় আসবেই...

Powered by Froala Editor