প্রাইড মান্থে এবার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সম্পর্কে সাধারণ মানুষ, প্রশাসন এবং রাজ্যের বিচার বিভাগীয় শাখার আধিকারিকদের সচেতন করতে বিস্তারিত গাইডলাইনও প্রকাশ করল আদালত। সেইসঙ্গে আইনত নিষিদ্ধ করা হল সমকামিতা ‘নিরাময়’-এর চিকিৎসাকেও। লক্ষ্য, সমকামী ও প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো।
এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় বছর খানেক আগে। মাদ্রাজের এক সমকামী দম্পতির খোঁজে পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরি লিখিয়েছিলেন তাঁদের পরিবার। স্পষ্টতই আইনি হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁদের। তারপরই মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। সেই মামলারই নিষ্পত্তি হল এবার। বিচারপতি এন আনন্দ ভেঙ্কটেশ মামলার রায় দিলেন তাঁদের পক্ষেই। শুধু তাই নয়, প্রান্তিক লিঙ্গযৌনতার মানুষদের যাতে এই ধরনের হয়রানির শিকার না হয়ে হয়— সেজন্য একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করলেন তিনি।
“৩৭৭ ধারার অবলুপ্তির সময়, সুপ্রিম কোর্ট আসলে এই কথাই বলেছিল। সেসময় উল্লেখ করা হয়েছিল সমাকামিতার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনামূলক প্রচারের দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে। প্রান্তিক লিঙ্গযৌনতার মানুষদের মৌলিক অধিকার বাঁচাতে গেলে এই প্রচার অন্যতম একটা জরুরি কার্যক্রম। সেটাই আরও নির্দিষ্ট করে সরকারের ও বিভিন্ন এজেন্সিকে সেই কাজটা বেঁধে দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট”, বলছিলেন কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রান্তকথা’-র কর্ণধার বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়।
শুধু সমাজ এবং প্রশাসনিক স্তরেই নয়, পড়ুয়াদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলতেও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিচারপতি আনন্দ ভেঙ্কটেশ। স্কুল ও কলেজের সিলেবাসে এলজিবিটি সংক্রান্ত পাঠ্যের অন্তর্ভুক্তিরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে গাইডলাইন অনুসারে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার থেকে লিখিত রিপোর্টও চেয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন
এলজিবিটিকিউ মানুষদের জন্য বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচি কলকাতায়
এই রায় যে এককথায় ঐতিহাসিক তা বলার অপেক্ষা থাকে না। সমকামিতা সম্পর্কে প্রচার ও শিক্ষা একদিক থেকে যেমন বৈষম্যতাকে কমিয়ে আনবে, তেমনই এই রায়ের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে হেনস্থার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক পদক্ষেপও নিতে পারবেন প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌনতার মানুষেরা।
আরও পড়ুন
এলজিবিটি অধিকারের পাশে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট, শুরু হল সচেতন কর্মশালা
সেইসঙ্গে বিচারপতি আনন্দ ভেঙ্কটেশের মানসিকতাও এক নজির তৈরি করল। শুধুমাত্র রায় দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন তিনি পাঠ নিয়েছেন মনোবিদের কাছে। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার থেকে আলোচনাও করেছেন তিনি। এমনকি গোটা বিচারপ্রক্রিয়ায় একাধিকবার সমালোচনা করেছেন নিজের। যা দৃষ্টান্তই বটে। বাপ্পাদিত্যবাবু জানালেন, “উনি বার বার উল্লেখ করেছেন যে মেজরিটির অংশ হওয়ায় এমন একটা বিষয়ে রায় দেওয়ার আগে বোঝা দরকার সমকামীদের প্রকৃত পরিস্থিতি। সেজন্য কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে উনি পরিধি বৃদ্ধি করেছেন, তারপর এই রায় দিয়েছেন। এই রায়টা গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, কিন্তু রায়টা যে পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে এসেছে— সেটাও বহু মানুষের চোখ খুলতে সাহায্য করবে।”
মাদ্রাজ হাইকোর্ট কর্তৃক প্রকাশিত এই গাইডলাইনের সঠিক প্রয়োগে বিচার ও প্রশাসনিক স্তরে বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেই আশাবাদী এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। সেইসঙ্গে এই রায়ের দরুন আগামীদিনে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই— এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা…
Powered by Froala Editor