চিতাবাঘের মুখ থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে 'সুপার মম' মধ্যপ্রদেশের কিরণ

সঙ্গে একটি লাঠি ছাড়া আর কোনো অস্ত্র নেই তাঁর। অথচ উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্ষুধার্ত চিতাবাঘ (Leopard)। আর তার মুখের সামনে ৬ বছরের ছোট্ট সন্তান। এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন এক আদিবাসী মহিলা। নিজের সন্তানকে বাঁচাতে বিপদের তোয়াক্কা না করেই শুরু করে দিলেন এক অসম যুদ্ধ। আর শেষ পর্যন্ত চিতাবাঘের মুখ থেকে সন্তানকে বাঁচিয়েও আনলেন তিনি। সম্প্রতি এমন ঘটনাই ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের (Madhyapradesh) সিধি জেলায়। ৬ বছরের সন্তান রাহুলকে বাঁচাতে চিতাবাঘের সঙ্গে খালিহাতেই লড়াই করে গেলেন কিরণ (Kiran) নামের ওই মহিলা।

অরণ্যবাসী মানুষকে একসময় হিংস্র জন্তুর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হত। কিন্তু সভ্য মানুষের জীবন সেইসব বিপদ থেকে অনেকটাই মুক্ত। আর তাই মানুষের শারীরিক ক্ষমতাও কমে এসেছে ক্রমশ। কেবল কিছু সুপারহিরো কাহিনিতে পাওয়া যায় অরণ্যবাসী জন্তুর সঙ্গে খালি হাতে লড়াইয়ের কথা। তবে বিপদের সময় যে সাধারণ মানুষও সুপারহিরো হয়ে উঠতে পারেন, সেই কথাই প্রমাণ করে দিলেন কিরণ। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে উঠেছে তাঁর এই সাহসিকতার কাহিনি। অনেকেই তাঁকে ‘সুপার মম’ বলেও উল্লেখ করছেন।

রবিবার সন্ধ্যায় তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ির সামনের দাওয়ায় আগুন জ্বালিয়ে বসে ছিলেন কিরণ। শীতের সন্ধ্যায় এভাবেই শরীর গরম রাখেন গ্রামের সকলেই। কিন্তু হঠাৎই একটি চিতাবাঘ এসে তাঁর ৬ বছরের শিশুপুত্র রাহুলকে তুলে নিয়ে চলে যায়। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গলের দিকে ছুটে যায় চিতাবাঘটি। কিরণও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। বাকি দুই সন্তানকে ঘরের দরজা আটকে বসে থাকতে বলে তিনি নিজেও দৌড় দিলেন জঙ্গলের দিকে। চিতাবাঘটি ঝোপের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিরণ লাঠি দিয়ে ঝোপ পিটিয়ে এবং তার সঙ্গে চিৎকার করে প্রাণীটিকে খুঁজতে থাকেন। এই সময় রাহুলকে ফেলে পালিয়ে যায় চিতাবাঘটি। তবে কিরণ ছেলের কাছে পৌঁছাতেই সে আবার ঝাপিয়ে পড়ে। তখন কিরণ হাতের লাঠিটিও ফেলে দিয়েছেন। ফলে খালি হাতেই লড়াই করতে হয় তাঁকে।

ইতিমধ্যে অবশ্য কিরণের চিৎকারের শব্দ কয়েকজন গ্রামবাসীর কানে গিয়েছিল। তাঁরা এসে পড়তেই চিতাবাঘটি পালিয়ে যায়। ছেলেকে কোলে নিয়ে ফিরে আসেন কিরণ। তবে এর মধ্যেই চিতাবাঘের আক্রমণে মা ও ছেলে দুজনেই গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তিও করা হয়। ইতিমধ্যে বনবিভাগের তরফ থেকে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে তাঁর জন্য। তাঁদের চিকিৎসার সব খরচও বনবিভাগ বহন করবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। মাতৃত্বের টান মানুষকে কত বড়ো বিপদের মধ্যেও সাহস যোগায়, সেটাই আবার প্রমাণ করলেন কিরণ।

Powered by Froala Editor

More From Author See More