গোটা বিশ্বজুড়েই বর্তমানে চর্চা চলছে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। এবং সেই প্রসঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠছে অরণ্যায়নের (Afforestation) কথাও। কিন্তু বলা আর করা— এই দুইয়ের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক। ক’জন মানুষ এগিয়ে আসছেন সেই কাজে? ক’টা দেশের প্রশাসনই বা উদ্যোগ নিচ্ছে বনভূমি তৈরিতে? তবে মধ্যপ্রদেশের (Madhyapradesh) ছাপোষা কৃষকরা এবার করে দেখালেন এমনটা। দেখালেন, সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব নয় কোনো কিছুই।
মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার মানেগাঁও ও দুঙ্গারিয়া গ্রাম। দু’দশক আগেও এই গ্রামের ছবি ছিল একদম অন্যরকম। মাইলের পর মাইল দেখা মিলত ফাঁকা প্রান্তরের। অনুর্বর মৃত্তিকা হওয়ায় সেই মাটিতে চাষের কথাই ওঠে না। ফলে, এক প্রকার মরুভূমির মতোই পড়ে ছিল এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে এখন সেই জায়গাকে দেখলে চেনাই দায়। সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল এক অরণ্য। কয়েক হাজার সেগুন গাছ।
হ্যাঁ, বিগত ২০ বছরে গোটা গ্রামের হুলিয়া বদলে ফেলেছেন সেখানকার কৃষকরা। তবে শুরুটা হয়েছিল আকস্মিকভাবেই। মানেগাঁও-এর কয়েকজন কৃষক প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন, চাষের জন্য উপযোগী না হলেও, এই ‘পরিত্যক্ত’ জমিতে দিব্যি বেড়ে উঠতে পারে সেগুন গাছ। আর্থিক লাভের কথা ভেবেই তাঁরা রোপণ করেছিলেন সেগুনের চারা। তাঁদের দেখে এগিয়ে আসেন আরও বেশ কিছু গ্রামবাসী।
এর প্রায় বছর চারেকের মধ্যেই রাতারাতি উবে যায় করেকটি বৃক্ষ। হ্যাঁ, কাঠ পাচার। রাতের অন্ধকারে কাজটি করেছিল কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। এই ঘটনাই চোখ খুলে দেয় গ্রামবাসীদের। লাভের জন্য অরণ্য তৈরি করলেই চুরি তো লেগেই থাকবে। আর তাতে কি হাল ফিরবে পরিস্থিতির? বরং, এই অরণ্যকে রক্ষা করতে পারলে মিলবে বন্যা থেকে পরিত্রাণ।
বিগত দু’দশকে তাই এই অরণ্য থেকে সমস্তরকম বনজ সম্পদ সংগ্রহই বন্ধ রেখেছেন গ্রামবাসীরা। সেইসঙ্গে চলে অরণ্যের দৈনিক পরিচর্যাও। অরণ্যের চারদিকে বসেছে বাঁশের বেড়া। শুধু কৃষকরাই নয়, তাঁদের এই উদ্যোগকে স্বীকৃতি জানিয়েছে ইন্দো-কানাডিয়ান এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি। প্রতি মাসে অরণ্যের পরিচর্যার জন্য গ্রামবাসীদের ৫০০০ টাকা উপবৃত্তিরও ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। সেইসঙ্গে নতুন করে বনায়নের জন্যই অল্প-বিস্তর অর্থায়ন করে তারা। সবমিলিয়ে ক্রমশ ধূসর জমিকে সবুজে পরিণত করার পথ দেখাচ্ছে মধ্যপ্রদেশের এই দুই গ্রাম…
Powered by Froala Editor