তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কার মন্নর পর্যন্ত বিস্তৃত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সেতু ‘রামসেতু’ (Ram Setu) বা অ্যাডামস ব্রিজ। ভূতাত্ত্বিকরা তাকে চুনাপাথরের প্রাকৃতিক সঞ্চয় বলেই জানিয়ে আসছেন। কিন্তু রামায়ণের কাহিনিকে তুলে ধরে এই মতের বিরোধীর সংখ্যাও কম নয়। তাঁদের দাবি, এই সেতু ভগবান রামের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার (Engineering Ability) প্রমাণ। এমনকি রামসেতু যে আসলে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি নয়, এই কথা প্রমাণের জন্য নাসার তথ্য বিকৃতিরও অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। তবে সেগুলো সবই বিভিন্ন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শিবিরের পক্ষ থেকে। এবার মধ্যপ্রদেশের সিলেবাসেও (Madhyapradesh Syllabus) জায়গা পেতে চলেছে সেই তত্ত্ব। আর ইতিমধ্যে তাই নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে।
কোভিডজনিত কারণে দীর্ঘদিন মধ্যপ্রদেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আগামী ১৫ তারিখ থেকে স্কুল-কলেজ খুলবে বলে ঘোষণা করেছে সরকার। আর সেইসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে স্নাতক প্রথমবর্ষের আবশ্যিক পাঠক্রমের সিলেবাসও। যে কোনো বিষয়ের পড়ুয়াদেরই পড়তে হবে মহাভারত, রামায়ণ, যোগশাস্ত্র এবং প্রাণায়ামের মতো বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই পাঠক্রমের গৈরিকীকরণ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
নতুন সিলেবাসে পড়ুয়াদের জন্য থাকছে রাজাগোপালাচারীর লেখা মহাভারতের মুখবন্ধ। তার সঙ্গে পড়তে হবে শ্রীরামচরিতমানস। এছাড়াও ‘ওঁ মন্ত্রোচ্চারণ’ নিয়েই থাকছে একটি বিশেষ অধ্যায়। থাকছে ভারতের চারযুগ, চারযুগে দৈব অবতারদের অস্তিত্বের বিষয়ও। সেইসঙ্গে চারিত্রিক মূল্যবোধ গঠনের জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে রামচন্দ্র চরিত্রটির উপরে।
অবশ্য মধ্যপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের চরিত্রগঠনের বিষয়ে জোর দিতেই পাঠক্রমের এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই বিষয়ে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।তবে পড়ুয়াদের চরিত্র নির্মাণের বিষয়ে কেন কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মের গ্রন্থকে জায়গা দেওয়া হল, তাই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এবং এর সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণের, ভারতে দৈব অবতারের অস্তিত্ব প্রমাণের মতো অবৈজ্ঞানিক বিষয় রাখা নিয়েও সরব অনেকেই। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা। ২০১১ সালেও ভাগবত গীতাকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ সরকার। কিন্তু তখন প্রবল বিরোধিতার মুখে সেই প্রস্তাব কার্যকর করা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক শিক্ষানীতির সূত্র ধরে সারা দেশজুড়েই শুরু হয়েছে অনুরূপ উদ্যোগ। এর আগেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধেও শিক্ষায় গেরুয়াকরণের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষায় আধুনিকতার পরিবর্তে কি আবার ফিরে আসছে মধ্যযুগীয় আচার-বিশ্বাস? দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তো বটেই, সার্বিক অগ্রগতির নিরিখেও এমন অভিযোগ রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়।
Powered by Froala Editor