প্রয়াত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের প্রপৌত্র, রাজপরিবারের শেষ বংশধরকে হারাল কলকাতা

কলকাতার সঙ্গে লখনৌ এর সম্পর্ক সুপ্রাচীন। কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন লখনৌয়ের নবাবরা। উল্টোদিকে লখনৌও আপন করে নিয়েছিল বাঙালিদেরও। সম্প্রতি ছিন্ন হল সেই শতাব্দীপ্রাচীন সম্পর্কেরই একটি সুতো। চলে গেলেন অযোধ্যার শেষ নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের প্রপৌত্র প্রিন্স কৌকাব কুদের সাজেদ আলি মির্জা। রবিবার সন্ধায় জীবনাবসান হয় তাঁর।

কলকাতার বাড়িতেই স্ত্রী, দুই পুত্র এবং চার কন্যাদের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। বার্ধক্যের পাশাপাশিই সম্প্রতি আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনা ভাইরাসে। সপ্তাহখানেক আগেই তাঁর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল বলে জানায় তাঁর পরিবার। চিকিৎসার সত্ত্বেও শেষ অবধি তাঁর ফেরা হল না ভাইরাসের প্রকোপ থেকে। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

উর্দু ভাষার একজন পণ্ডিত ছিলেন সাজেদ আলি মির্জা। আলিনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সম্পন্ন করেছিলেন উর্দুর ডক্টরেট। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে প্রপিতামহ ওয়াজিদ আলি শাহের ভূমিকা। পরবর্তীকালে আলিনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৯৩ সালে সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

তবে রাজবংশের বংশধর এবং একজন অধ্যাপকের বাইরেও আরও একটি স্বল্পচর্চিত পরিচয় রয়েছে সাজেদ আলি মির্জার। বিলিয়ার্ড এবং স্নুকারের পথিকৃৎ তিনিই। ছিলেন ‘দ্য বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’-র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এছাড়াও তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ‘ওয়েস্টবেঙ্গল বিলিয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘উত্তরপ্রদেশ বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পথ চলা।

কলকাতার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে আয়োজিত ১৯৬৩-৬৪ সালের প্রথম স্নুকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রধান রেফারিও ছিলেন তিনি। সত্তরের দশক অবধি প্রধান রেফারির ভূমিকা পালন করেছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। আইবিএসএফের বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা এবং এমএম বাগ ট্রফির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফর্ম্যাটেই আজও স্বমহিমায় চলছে এই দুটি প্রতিযোগিতা। 

মেটিয়াবুরুজের শিবতৈনাবাদ ইমামবাড়া ট্রাস্টের সিনিয়র ট্রাস্টি ছিলেন সাজেদ আলি মির্জা। উল্লেখ্য এই ইমামবাড়াতেই সমাধিস্থ রয়েছেন লখনৌয়ের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। সাজেদ আলি মির্জার প্রয়াণের সঙ্গে শেষ হল ইতিহাসের একটি অধ্যায়। কলকাতা জন্মস্থান না হলেও নিজের শহর হিসাবেই কলকাতাকে আপন করে নিয়েছিলেন সাজেদ আলি। আর পাঁচজন সাধারণের মতোই মিশে গিয়েছিলেন কলকাতার ভিড়ে। রেশ পড়ল সেই সম্পর্কেই...

আরও পড়ুন
নবাবি ঐতিহ্য এখন অতীত, কলকাতার বুকে মৃত্যুর দিন গুনছে ‘মুর্শিদাবাদ হাউজ’

Powered by Froala Editor