দূষণের পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে হুমকির অন্যতম আরও একটি কারণ মানুষের আগ্রাসন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইন-কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও খোলা বাজারে দেদার বিকোচ্ছে কচ্ছপ। হ্যাঁ, খাদ্য হিসাবেই। ফলাফল— ভারতের বুক থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে মিষ্টি জলের কচ্ছপদের অস্তিত্ব। আজ থেকে বছর আটেক আগে এই কঠিন বাস্তবকে সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করে লড়াইয়ে নেমেছিলেন লখনৌয়ের তরুণী অরুণিমা সিং (Arunima Singh)। একক প্রচেষ্টাতেই শুরু করেছিলেন সংরক্ষণ প্রকল্প। এবার তাঁর সেই কৃতিত্বকে সম্মাননা জানাল স্কটল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাটওয়েস্ট গ্রুপ (NatWest Group)।
সম্প্রতি, কচ্ছপ সংরক্ষণে (Turtle Conservation) উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ন্যাটওয়েস্ট গ্রুপের চলতি বছরের ‘আর্থ হিরোস সেভ দ্য স্পিসিস’ পুরস্কার উঠল অরুণিমার হাতে। ২০১৩ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল অরুণিমার এই সংরক্ষণ অভিযান। বিগত আট বছরে ২৮ হাজারেরও বেশি কাছিমের প্রাণ বাঁচিয়েছেন লখনৌ-এর এই তরুণী। তবে শুধু কচ্ছপই নয়। একইসঙ্গে তাঁর সংরক্ষণ কর্মযজ্ঞে জায়গা পেয়েছে ডলফিন, ঘড়িয়াল এবং নদীর কুমিরও। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত আট বছরে ২৫টি ডলফিন, ৬টি নদীর কুমির এবং ৪টি ঘড়িয়ালের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন অরুণিমা।
অবশ্য, সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রতি তাঁর টান ছিল ছোটোবেলা থেকেই। কিশোর বয়সে ঠাকুর্দা-ঠাকুমার সঙ্গে অরুণিমা গঙ্গার ধারে বেড়াতে যেতেন শুধুমাত্র ডলফিন, কচ্ছপ, বিভিন্ন মাছের দেখা পাওয়ার জন্য। সেসময় দূষণের মাত্রাও ছিল কম। ক্রমশ বদলেছে পরিস্থিতি। দূষণের কারণে এখন তাদের দেখা মেলাই ভার। কিন্তু এত কিছুর পরেও কমেনি মানুষের লোভ, বন্যপ্রাণীদের প্রতি আগ্রাসন। এই পরিবেশগত ও জীববৈচিত্রের পরিবর্তন ভাবিয়ে তুলেছিল অরুণিমাকে। জ্ঞানতভাবেই তাই পড়াশোনার বিষয় হিসাবে সংরক্ষণ বিজ্ঞানকে বেছে নেন তিনি।
২০১১ সালে স্নাতকতা পড়াকালীন সময় থেকেই অরুণিমা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ শুরু করেন টার্টল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স নামক একটি অলাভজনক সংস্থায়। পরবর্তীকালে লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ওপর স্নাতকোত্তর কোর্স। ২০১৩ সালে মাস্টার্স সম্পূর্ণ করার পরে পুরোদমে শুরু হয় সংরক্ষণ কর্মসূচি।
আরও পড়ুন
এক শতাব্দী আগে বিলুপ্ত কচ্ছপের প্রজাতি এখনও লুকিয়ে গ্যালাপাগোসের অরণ্যে
কিন্তু সাধারণ মানুষকে যদি সচেতন না গেলে আদৌ কি সফল হবে এই সংরক্ষণের উদ্যোগ? এক কথায় উত্তর, না। আর সেটা নিজেও খুব ভালো করেই বুঝেছেন অরুণিমা। তাই সংরক্ষণের পাশাপাশি সমানভাবে চলছে তাঁর প্রচার কর্মসূচিও। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বিগত বছরগুলিতে অসংখ্য কর্মশালার আয়োজন করেছেন অরুণিমা। জীববৈচিত্রের গুরুত্ব এবং সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশুকে। তাঁরাই পরবর্তী প্রজন্মের অরুণিমা হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। বর্তমানে এই বিরাট কর্মযজ্ঞের পাশাপাশিই চলছে তাঁর গবেষণা। বিষয়, ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাসকারী সামুদ্রিক প্রাণীদের সংরক্ষণ এবং পুনর্বাসন। আগামীদিনে তাঁর এই গবেষণাও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় নতুন দিশা দেখাবে বলেই আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা…
আরও পড়ুন
লিটল আন্দামানে পর্যটন শিল্পে ‘উন্নয়ন’, বিপন্ন বৃহত্তম কচ্ছপ প্রজাতি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আমাজনে কচ্ছপের সুনামি, ভাইরাল ৯২ হাজার সদ্যোজাত কচ্ছপের নদীতে নামার ভিডিও