জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকাকে। সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশেও। কিন্তু, ভারত চুপ! বাংলাও চুপ! এখানে কি সাদা-কালো ভেদ, বর্ণবিদ্বেষ হয় না? তাহলে এত কেন ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন? খবরের কাগজে ‘পাত্র-পাত্রী চাই’-এও তো একই দৃশ্য চোখে পড়ে? নিজেদের জীবনেও এমন কথা কি শুনিনি আমরা?
তবে এটাই একমাত্র চিত্র না। অনেকেই এসব কিছু সরিয়ে রেখে খুঁজে নিতে চেয়েছে আসল মানুষটিকে। রংয়ের আড়ালে যিনি রয়েছেন, তাঁকেই দেখতে চেয়েছেন বারবার। চার হাত একও করেছেন। সবার কটু মন্তব্য দূরে সরিয়ে নিজের জীবনকে উদযাপন করছেন নিজের মতো। এই গল্পে যে দুজন বঙ্গসন্তানের কথা বলা হবে, তাঁরা সেই গণ্ডি ভেঙেছেন। বিয়ে করেছেন সেই দেশের মানুষকে, যাকে এখনও অনেকে ‘কালো মানুষের দেশ’ বলে জানে— আফ্রিকা!
ঘানেফো আনসুমানা ক্রোমা— বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলা ও ভারতের ফুটবল ময়দানের অতি পরিচিত একটি নাম। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান— কলকাতার দুই প্রধানের হয়েই মাঠে নেমেছেন তিনি। সেই আনসুমানা ক্রোমার সঙ্গেই বিবাহসূত্রেই আবদ্ধ হয়েছেন বাংলার পূজা দত্ত। বিয়ের পর যার নাম সাদিয়া। দুজনের সুখী সংসার। কোনোরকম ট্যাবুর পরোয়া করেননি পূজা। ক্রোমার বাড়ি সুদূর লাইবেরিয়ায়। দরিদ্র পরিবারে জন্মে ছোটো থেকেই লড়াই চালিয়ে আজ এখানে। হোক না বাড়ি আফ্রিকায়, তো কি! ভালোবাসার কি দেশ, বর্ণ আছে নাকি!
একই ঘটনা ঘটিয়েছেন কলকাতার ছেলে দেবমাল্য। তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন সিমোনে, যিনি একজন আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলা। আমেরিকাতেই দুজনের আলাপ, তারপর প্রেম; আর বিয়ে! অবশ্য উদাহরণ শুধু এই দুজনেই থেমে থাকে না। একটু খোঁজ নিলেই আরও এমন উদাহরণ দেখতে পাবো আমরা। ক্রোমা, সিমোনে— দুজনেরই শিকড় জড়িয়ে আছে আফ্রিকায়। সেই আফ্রিকা, যাকে আজও অনেকে ব্যঙ্গ করে কালো মানুষের দেশ বলেন। একসময় এই আফ্রিকার মানুষরাই দাসপ্রথার বর্বর অত্যাচারের সাক্ষী থেকেছে। আজও রেহাই মেলেনি সেই অত্যাচার থেকে। দিকে দিকে এরকম অনেক জর্জ ফ্লয়েড লুকিয়ে আছে। সবাই হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়লে রঙের এমন কৃত্রিম ব্যবধান কোথায় চলে যাবে!
আরও পড়ুন
জর্জ ফ্লয়েডের অন্তিমযাত্রায় সঙ্গ দিলেন প্রতিবাদীরা, শোকজ্ঞাপন গোটা আমেরিকার
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রতিবাদের আগুন ছড়াল ব্রিটেনে, ভাঙা হল দাস ব্যবসায়ীর মূর্তি, রেহাই নেই ‘রেসিস্ট’ চার্চিলেরও