পূর্ব সতর্কতার জন্য বাঁচল অজস্র জীবন, নেপথ্যে ‘সাইক্লোন ম্যান’ মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র

ভারতবর্ষের পূর্ব উপকূল দিয়ে সম্প্রতি তাণ্ডব চালিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় আমফান। ১৯৯৯ সালের পর এটাই প্রথম সুপার সাইক্লোন। ঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ঘটে গিয়েছে। যদিও ঝড়ের তীব্রতার তুলনায় তার পরিমাণ অনেকটাই কম। তার কারণ অনেক আগে থেকে পূর্বাভাস পাওয়ায় প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই কাজের নেপথ্যে আছেন যে মানুষটি, তাঁর খবর কতজন রাখেন?

সাইক্লোন হোক বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তার পূর্বাভাস দিতে গেলে আবহাওয়ার সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণের সঙ্গে প্রয়োজন দূরদর্শিতা। আর এই জায়গাতেই তাঁর অনন্যতা। তিনি মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। ২৭ বছরের কর্মজীবনে অসংখ্য ঝড়ের তাণ্ডব দেখেছেন তিনি। আর তাঁর পূর্বাভাস মিলেছে অক্ষরে অক্ষরে। তাই আজ তিনি ভারতের 'সাইক্লোন ম্যান' নামে পরিচিত। ১৯৯২ সালে ইন্ডিয়ান মেটিরিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের পুনে অফিসে যোগ দেন ওড়িশার অধিবাসী মহাপাত্র। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান সংস্থার অধীনে থেকে নানা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের উপর নজর রেখেছেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে তিনি ঘূর্ণিঝড় বিষয়ক বিশেষ শাখার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এই সময়কালে তিনি দেখেছেন ফাইলিং, তিতলি, মেকুনু, ফণীর মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। তাঁর দেওয়া পূর্বাভাসের ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষের তৎপরতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। গতবছর থেকে তিনি ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের শীর্ষপদে আসীন। এছাড়াও বিশ্ব আবহাওয়া বিজ্ঞান সংস্থার স্থায়ী সদস্য তিনি। ২০১৩ সাল থেকে তিনি এই সংস্থার কর্মসমিতির মনোনীত সদস্য। একইসঙ্গে কাজ করে চলেছেন দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যও।

মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র তাঁর দূরদর্শিতার জন্য বহুবার সম্মানিত হলেও তিনি নিজে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নতির কথাই বলেন বারবার। তিনি দেখিয়ে দেন, ২০০৭ সালের আগে অনেক ক্ষেত্রেই আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস মিলত না। কিন্তু গবেষণাগারের যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ এবং অতি উন্নত কম্পিউটার ব্যবস্থার ফলেই ২০০৯ সাল থেকে এই পূর্বাভাস অনেক বেশি নিখুঁত হয়েছে। তবে সেই উন্নতির পিছনেও তো তাঁর অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। যখন অনেকেই বলেন, বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাই বেশি; তখনও ধ্বংসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

আর এই কাজে তাঁর একমাত্র অস্ত্র বিজ্ঞান। তবে সেইসঙ্গে অবশ্যই আবহাওয়া দপ্তরের অন্যান্য কর্মচারী এবং দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম তাঁর লড়াইকে সফল করে তুলেছে। আর এর ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ।