কলকাতায় গির্জার সামনে লাইন দিয়ে বসে আছেন সাহেবরা। অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন। সময় দেখছেন বারবার; আর যেন তর সইছে না। কিন্তু কীসের এত ব্যস্ততা? হঠাৎ দেখা গেল, গির্জার দিকেই এক এক করে হেঁটে আসছেন মেম সাহেবরা। তারপর আরেক হুড়োহুড়ি। কিন্তু কীসের এত ব্যস্ততা? কীসের এত উচাটন? এ সবই হল বিয়ের অনুষ্ঠান। প্রাচীন কলকাতার সাহেবি বিয়ে…
ভূমিকা পড়ে কী মনে হচ্ছে? এমন দৃশ্য তো কালীঘাটের ক্ষেত্রেই একমাত্র প্রত্যক্ষ করেছেন সবাই। পালিয়ে গিয়ে বিয়েই হোক, বা অর্থের সামর্থ্য না থাকায় কম খরচে বিয়ে— সমস্ত ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই অঞ্চল। তবে আজকের গল্প কালীঘাটের নয়। এই গল্প বাঙালিরও নয়; তবে কলকাতার তো বটেই। তখন ব্রিটিশদের অধীনে চলে এসেছে দেশ। রাজধানী হিসেবে কলকাতাও নতুন রূপ পাচ্ছে একটু একটু করে। তৈরি হচ্ছে সরকারি কাজের জায়গা, সৌধ, এবং অবশ্যই চার্চ। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, সেন্ট জেমস চার্চের মতো বিখ্যাত স্থাপত্যগুলিও রূপ পাচ্ছে। কিন্তু ইংরেজ মানে তো কেবল রাজপুরুষ নয়। তাঁদের সঙ্গে হাজির হয়েছেন সাধারণ মানুষরাও। নতুন দেশে নতুন চাকরি করে যদি জীবন অতিবাহিত করা যায়। দলে দলে ইংরেজরা ভিড় জমাতে লাগলেন কলকাতায়।
সবই তো হল। কিন্তু এই দেশটি তো ভারতবর্ষ। কাজ তো নয় পাওয়া গেল; কিন্তু কন্যে? দেশীয় মেয়েদের সবাই বিয়ে করলেন না। যারা করলেন না, তাঁরা কি অবিবাহিতই থেকে যাবেন সারাজীবন? এখানে তো দরকার বিদেশি মেমসাহেবদের। ব্যস, শুরু হল বন্দোবস্ত। কীরকম? বিলেত থেকে কোনো জাহাজ এলেই খোঁজ পড়ত কোনো অবিবাহিতা মেয়ে আছে কিনা। যদি থাকত, শুরু হয়ে যেত বিয়ের আয়োজন! সাহেবরাও প্রস্তুত হয়ে যেতেন। আর এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেন্ট জন’স চার্চ। সেখানেই চলত ‘মহাযজ্ঞের’ আয়োজন।
প্রায় জোর করে বিয়ে করারই অদ্ভুত ‘প্রথা’ এটি। রবিবার সকাল সকাল লাইন দিয়ে চার্চে হাজির হতেন সাহেবরা। অবিবাহিত মেয়েরা এলেই শুরু হয়ে যেত তোড়জোড়। অনেক সময় স্রেফ বিয়ের জন্যও মেয়েরা জাহাজে করে আসতেন ভারতে। আর কলকাতায় পৌঁছলেই, গন্তব্য সেন্ট জন’স চার্চ। তবে অনেক সময় এমনও হয়েছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটির হাত ধরে পাদ্রির কাছে উপস্থিত হতেন সাহেবরা। আর পাদ্রিরাও লাইন দিয়ে বিয়ে দিতেন। সেন্ট জন’স চার্চ হয়ে উঠত সেকালের খ্রিস্টান সাহেবদের ‘কালীঘাট’। একবার ইংল্যান্ড থেকে এক মহিলা এসে কলকাতার এমন অবস্থা দেখে যারপরনাই অবাক! এ কী চলছে এখানে? দেশে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে সাবধানবাণী- ‘কলকাতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার’! অবশ্য সেই ‘হুঁশিয়ারি’ কাজে এসেছিল কিনা, জানা যায় না…
তথ্যসূত্র – ‘শ্রীপান্থের কলকাতা’/ শ্রীপান্থ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এখনও অনিশ্চিত কলকাতা বইমেলার ভবিষ্যৎ, কী ভাবছেন প্রকাশকরা?