সালটা ১৮৩৭। ২৮ বছরের ডারউইন সদ্য ফিরেছেন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে। এবার তাঁর আবিষ্কার স্পষ্টভাবে লিখে ফেলা কাজ। টেনে নিলেন খাতা পেন। নোটবুকের উপর বড়ো বড়ো অরে লিখলেন, ‘আই থিংক’। তারপর একটা গাছের মতো ছবি। সেখানে কীভাবে অমেরুদণ্ডী প্রাণী থেকে মেরুদণ্ডী এবং পরে স্তন্যপায়ীর উদ্ভব হল, তাই আঁকলেন। ঠিক এমনটাই ছিল ডারউইনের প্রথম গবেষণাপত্রের পাণ্ডুলিপি। আর কিছুদিন আগে পর্যন্ত সেটা রাখা ছিল কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে। কতদিন আগে পর্যন্ত? সেকথা অবশ্য বলা মুশকিল। কারণ বিগত ২০ বছর ধরে সেই খাতার সন্ধান জানেন না কেউ।
২০০০ সালের শেষদিকে কিছু বই সংরক্ষণের জন্য কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে আবার সেইসব বই ফেরৎ আসে। শুধু দুটি বই আর পাওয়া যায়নি। তার মধ্যে একটি ডারউইনের এই পাণ্ডুলিপি। আর অন্যটির নাম এখনও উল্লেখ করা হয়নি। বিগত ২০ বছর ধরে এই খবর চেপে রাখা হয়েছিল শুধু এই আশায় যে, কোথাও ভুল করে রাখা হয়েছে। ঠিক সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু লাইব্রেরির বর্তমান কিউরিয়েটর ডঃ জেসিকা গার্ডনার আর এই ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে আটকে থাকতে চাইলেন না। তিনি নিশ্চিত যে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে চুরি করেছে ডারউইনের পাণ্ডুলিপি।
২০১৭ সালে কিউরিয়েটরের দায়িত্ব নিয়ে আসেন গার্ডনার। তারপর বিস্তর খোঁজাখুঁজি চলেছে। তার আগেও চলেছে। কিন্তু ডারউইনের পাণ্ডুলিপির কোনো হদিশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে বিষয়টি প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন তিনি। আর সেইসঙ্গে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন। বিবর্তনবাদের অন্যতম প্রবক্তা ডারউইনের প্রথম গবেষণাপত্র এভাবে হারিয়ে যাওয়া যে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অপূরণীয় ক্ষতি, সেকথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor