গত মে মাসের এক বিকালে ওসাওয়ানা হ্রদের ধারে বাড়ির বাগানে বসে কাঠ খোদাই করছিলেন জন পাওয়ার্স (John Powers)। এটাই তাঁর মূর্তি তৈরির জন্য সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। ইতিমধ্যে আমেরিকার নানা প্রদর্শনশালায় সেইসব মূর্তি সমাদৃতও হয়েছে। তবে সেদিন পাওয়ার্স কোনো মূর্তি তৈরি করছিলেন না। বাড়ির জন্য একটি শৌখিন বেড়া বানাচ্ছিলেন। পাশেই বসে ছিলেন স্ত্রী। এমন সময় ঘটে গেল অঘটন। কাঠের একটি টুকরো ছিটকে এসে লাগে তাঁর কপালে। এক মুহূর্তের জন্য হাত কেঁপে যায়। আর ঠিক তখনই তাঁর বাঁ-হাতটি চলে যায় স্বয়ংক্রিয় করাতের নিচে। দুটি আঙুল তখনই কাটা পড়ে, অন্য দুটি আঙুলও গুরুতর জখম হয়।
পাওয়ার্স ভেবেছিলেন, এবার হয়তো মূর্তি বানানো ছেড়েই দিতে হবে তাঁকে। কিন্তু শিল্পী মনকে আর কতদিনই বা ভালোবাসার আকর্ষণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়? পাওয়ার্সও তাই আবার ফিরে এসেছেন নিজের ছন্দে। তবে এবার তাঁর শিল্পের ধরন বদলে গিয়েছে। বরং শিল্পের মধ্যে দিয়েই হারিয়ে যাওয়া আঙুলের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে চান তিনি। ছোটো ছোটো মিনিয়েচার ভাস্কর্যগুলিতে এক একটি আঙুলকেই করে তোলেন এক একটি চরিত্র। আবার কখনও এমন মূর্তি তৈরি করেন, যা কৃত্রিম আঙুলের মতো স্বচ্ছন্দে হাতে পরে নেওয়া যায়। না, কৃত্রিম অঙ্গের মতো এগুলি দিয়ে কোনো কাজ তিনি করতে পারেন না। তবে এই মূর্তিগুলি তাঁকে মানসিক শক্তি জোগায়। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত আরও অনেক মানুষকে মানসিক শক্তি জোগাতে পারবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
শুরুটা অবশ্য হয়েছিল কিছু ছোটো ছোটো কফিন তৈরি দিয়ে। বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুল এবং অনামিকা, দুটিই কাটা পড়েছিল দুর্ঘটনায়। আর মূর্তি তৈরিতে এই দুটি আঙুলই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন পাওয়ার্স। তাই প্রথমেই খুব সূক্ষ্ম কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। কফিনগুলি তৈরি করেছিলেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া দুটি আঙুলের জন্যই। তারপর সেই কফিনের মধ্যে আঙুলদুটি রেখে তাদের বাড়ির বাগানে কবরও দিয়েছেন। কবরের উপরের ফলকটিও তৈরি করেছেন তিনি নিজেই। এরপরেই একটু একটু করে শুরু করে দেন নিজের অভিনব শিল্পগুলি তৈরির কাজ। কোথাও দুটি আঙুলের সঙ্গে স্নায়বিক তন্তুর কাঠামো যোগ করে বুঝিয়েছেন তাদের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগের বিষয়টি। কোথাও আবার আঙুলগুলিই হয়ে উঠেছে এক একটি মানুষ চরিত্র।
পাওয়ার্সের সহমর্মী হয়ে এগিয়ে এসেছেন অন্যান্য কয়েকজন শিল্পীও। এর মধ্যে অ্যাডাম পুটসের তৈরি একটি মূর্তি সম্প্রতি প্রদর্শিতও হয়েছে। সেখানে একটি বাঁ-হাতের বুড়ো এবং অনামিকা আঙুলদুটি হয়ে উঠেছে মধ্যযুগের দুই রোমান নাইট। আবার তাদের চেহারা দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এগুলি আসলে কৃত্রিম আঙুল। পাওয়ার্স চান, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটেছে এমন সমস্ত মানুষের যন্ত্রণার কথা ধরা থাক শিল্পের মধ্যেই। মানুষের এই অনুভূতিকে বাদ দিয়ে শিল্পের জগৎ সম্পূর্ণ হতে পারে না।
আরও পড়ুন
পক্ষাঘাতে হারিয়েছে চলচ্ছক্তি, মুখ দিয়েই ছবি আঁকেন বাংলাদেশের শিল্পী
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শিল্পীদের তুলিতে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রদর্শনী মার্কিন রেস্তোরাঁয়