লকডাউনের গপ্পো ১২

আরে! ওদিকে যাবেন না। এদিকে, এদিকে আসুন…

একি! আ…আ…আপনি হঠাৎ এমন করে হাত ধরে টেনে গলির ভিতরে…

…নিয়ে এলাম। আপনার ভালোর জন্যেই।

ম…মানে! আপনার মতলবটা কি বলুন তো। লকডাউনে রাস্তায় লোক চলাচল কম। সেই সু্যোগে একটা মেয়ের হাত ধরে …

কি করব বলুন ! নিরুপায়। আপনি চেঁচিয়ে লোক জড়ো করতে পারেন। যদিও শুনশান রাস্তা দুমিনিটে ভরবে না। মানুষ তো আর ম্যাগি নয়।

দেখুন! আপনার মতন ছেলেদের আমার চেনা আছে। বেশী স্মার্টনেস ফলাতে যাবেন না। এদিকে আপনি নতুন তাই হয়ত জানেন না আমি কে…

ঠিক ধরেছেন। পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে গেছে। তবে এই মুহূর্ত থেকে এটা আমার এরিয়া। এবার রোজই দেখতে পাবেন!

এরিয়া ! কি বলতে চাইছেন আপনি !

কন্ট্যাক্ট লিস্ট স্ক্রল না করে ফোনটা করেই ফেলুন। বাড়িতে ফোন করবেন তো ? ভালোই, আপনার বাড়ির লোকের সঙ্গে আলাপ হয়ে যাবে।

বাড়ির লোককে ফোন করতে যাব কেন? আপনাদের মত বেয়াড়া লম্পটদের শায়েস্তা করার জন্যে আমি একাই যথেষ্ট। দেখি! পথ ছাড়ুন।
আরে! আরে! বলছি যাবেন না।

দেখুন! আপনি কিন্তু সুযোগের সদব্যবহার করছেন। এই নিয়ে দুবার আপনি আমাকে টাচ করলেন।

কথায় কাজ না হলে, গায়ে হাত না দিয়ে উপায় কি!

হোয়াট ডু ইউ মিন ? আপনি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনাকে ওয়ার্ন করছি, বিয়াস বসু কে আপনি চেনেন না।

সরি ফর বিয়িং রুড…
দেখুন, আমি কিন্তু সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেইনটেইন করেই দাঁড়িয়ে আছি। যদি আমার ইন্টেনশন খারাপই হত, তাহলে এতক্ষণেও কি ভায়োলেট করতাম না?

মানে আর কি! কিছুই না। বাই দ্য ওয়ে, আপনার নাম বিয়াস! বাহ! ইউনিক!

হুম! তাতে আপনার কি?

না কিছুই না। আচ্ছা, বিয়াস শাখানদী না উপনদী ?

হোয়াট দ্য…

কুল…কুল… এখনই সব এনার্জি খরচ করে ফেলবেন না। নইলে আরও পাঁচ মিনিট আমায় সহ্য করবেন কি করে?

হুহ! এক সেকেন্ডও যদি আর আমি এখানে…

উফ! এবার কি হাত পা বেঁধে রাখব?

ফের আপনি আমায় …

হুম! হ্যাট্রিক করতে বাধ্য হলাম।

দেখুন, আমার একটা খুব জরুরি কাজ আছে । নয়ত এতক্ষণে আমি বাড়ি চলে যেতাম। ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেপাড়ার ছেলেদের ফালতু কথা শোনার ইচ্ছে আর সময় কোনোটাই আমার নেই।

হুম! পাড়ার ছেলে হলে চান্স ছিল বলছেন ? তা, এত জরুরি কাজটা কি ?

সে কৈফিয়ত কি আপনাকে দেব নাকি! আপনি কে বলুন তো!

সেটা আমিও ভাবছি। হম আপকে হ্যায় কউন?

ইয়ু আর ক্রসিং অল লিমিটস। ঐ তো, মেন রোডে পুলিশ রাউন্ড দিচ্ছে! আপনার ওপরচালাকির মাসুল এবার বুঝিয়ে দিচ্ছি। আবার! আবার আপনি…

বারবার, চারবার। বুঝতেই পারছেন, বড় শক্ত কামড়। আপনি তো ফোন করলেন না কাউকে! আমিই একটা ফোন রিসিভ করি বরং। অনেকক্ষণ ধরে বাজছে, ‘বলো পরেশ দা! এদিকে সব ওকে। উইথআউট মাস্ক কেউ বাইরে নেই। রাস্তাও ফাঁকা। হ্যাঁ, মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখলে ধরব তো বটেই। ও আচ্ছা! একেবারে ভ্যানে তুলতে হবে? ঠিক আছে। আমার বিটে মনে হচ্ছে না কোনো কেস পাবো। এখানে সবাই দেখছি বাড়িতে। খালি দুটো ছেলে স্কুলের রোয়াকে বসে আড্ডা দিচ্ছিল, তিরিশটা স্কোয়াট করিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। সেও অনেকক্ষণ হলো। হ্যাঁ…হ্যাঁ… আজ সিভিল ড্রেসেই ছিলাম। ভালো কথা, তাহলে আমি সাইন অফ করি? দুটো তো বাজতে চলল। হ্যাঁ… কাল সকালে এসে যাব। ওকে। সুশীল দা এসেছে ? আচ্ছা। তাহলে তো তোমারও ডিউটি শেষ হতে চলল। রাখছি।’ ‘ইতনা সন্নাটা…’ ও আপনি আছেন? এতো চুপচাপ দেখে ভাবলাম বুঝি চলে গেছেন।

আপনি …

হুম! সদ্য জয়েনিং।

আ…আমি বাড়ি ফিরব কি করে ? মেন রোডে তো পুলিশ।

সে কি ! আপনি না বিয়াস বসু !

সরি, আসলে মাস্কটা বাড়িতে ভুলে …

তা বেরিয়েছিলেন কেন?

ইয়ে বাড়িতে জায়ফল, জয়িত্রী…

ও, এটাই আপনার জরুরি কাজ! বিরিয়ানির মশলা জোগাড়ের জন্যে এত…

না, মানে…

এই নিন!

হুম, আজ থানার তরফে মাস্ক বিলি কর্মসূচি ছিল। আমার কাছে একটা থেকে গেছে দেখছি। পরে নিন। এবার বুঝলেন কেন এক… দুই… তিন… চার…

আশা করি আর কোনোদিন…

…এই ভুল হবে না।

মিস বিয়াস বসু! একটা কথা ছিল…

বলুন।

পাড়ার ছেলেরা তো আপনার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করে না যা বুঝলাম, বেপাড়ার ছেলেরা সে দুঃসাহস করতে পারে তো?

More From Author See More

Latest News See More