লকডাউন এর গপ্পো ৬

আদিত্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে…. এটা বাড়ির লোক কে বোঝানো যায় না…. মা চিৎকার করে রোজ ঘরটা গোছানো দরকার বলে…. তাই আজকে ঘুম থেকে উঠেই আদিত্য ঘর গোছাবে ঠিক করেছে…. মায়ের যদিও সেটা নিয়েও সমস্যা…. বলছে ব্রেকফাস্ট না করে কাজ দেখানো হচ্ছে….

ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ঝাড়পোছ শুরু হয়…. প্রথমে ওয়ার্ডরোব না বুকসেলফ…. সবেরই এক অবস্থা…. বুকশেলফ দিয়েই শুরু হল নোংরা ঘাঁটা…. মুখে বাইরে বেরনোর মাস্কটা পরে নিল…. ধুলো কম লাগবে….

কত দিনের পুরোনো সব বই… নোটস এর xerox… সব যে কেন রাখা কে জানে… এক এক করে ফেলতে লাগলো মেঝেতে… B-Tech-এর first ইয়ারের নোটসও রয়েছে… এইত্তো.. .SG স্যারের নোটস, PKM-এর নোটস…. ফার্স্ট ইয়ারের freshers welcome-এ ওরা একটা প্যারডি করেছিল… ইসস কী খারাপ ছিল ব্যাপারটা… সেটাও আছে… পড়তে বসে যায় আদিত্য… "তোমারো পড়ানো যাহা চায়… আমি তাই গো… আমা ছাড়া আর এ জগতে কেহ নাই কিছু নাই গো…" যাতা… নিজের মনেই হাসতে থাকে আদিত্য… রবি ঠাকুর এর গানের প্যারডি করা নিয়ে স্যার দের কাছে কম ঝাড় খায়নি ওরা… but পুরো creditটা ঐন্দ্রিলার… ওই বানিয়েছিল… ঐন্দ্রিলা…… সবাই বলতো OD… হেব্বি ডমিনেটিং… কিন্তু mechanical-এর পেছনের সিঁড়িটায় যখন ওকে জড়িয়ে ধরত তখন মনে হত একটা মা হারা অনাথ বাচ্চা… খুব সুন্দর হাতের লেখা ছিল… পাগল ছিল একটু… হঠাৎ করে সব ছেড়ে masscom নিয়ে পড়তে শুরু করল… আদিত্য তখন সবে জয়েন করেছে নতুন চাকরিতে…

"আমাকে একটা বছর সময় দে না please… কাজের জায়গা টা একটু শক্ত করে নিই"

"আমি পারবো না রে… I need to get married…বাইরে একা একা থাকা সম্ভব না…"

"মানে তোর কাছে বিয়েটা important… আমাকে বিয়ে করাটা নয়…"

"হ্যাঁ তাই…"

"আচ্ছা তাহলে তুই বিয়েটা করে নে…আমি কিন্তু তোকে ভালোবাসি আদিত্য"

Last conversation ছিল এটা… ঐন্দ্রিলার সঙ্গে…

তারপর আর কখনো দেখাও হয়নি ওদের… না… আদিত্য বিয়ে করেনি… অন সাইট চলে গিয়েছিল হঠাৎ করে… বাড়িতে টাকার দরকার ছিল তখন… আর মায়ের ঐন্দ্রিলাকে ঠিক পছন্দ ছিল না… ঠিক কারণটা আদিত্য এখনো জানে না… শুধু হাত গুটিয়ে অনেক দিন ও miracle-এর অপেক্ষা করেছিল…

ঐন্দ্রিলাও বিয়ে করেনি সে জানে… বন্ধু দের থেকে খবর পেয়েছিল… ভালো পোস্টে কাজ করে একটা মিডিয়া house-এ… আর খোঁজ করেনি ও… মুখোমুখি হওয়ার সাহস ছিল না… destiny ভেবে নিজেকে আটকে নিয়েছিল….

একবার ফোন করবে… সাতটা বছর কেটে গেছে মাঝখানে… নাহ থাক… যেচে অপমানিত হওয়ার কী দরকার… ধুলো ঝাড়তে গিয়ে বুঝতে পারে একটু জল এসেছে চোখে…

"হ্যালো…"

"হ্যাঁ বলুন"

"চিনতে পারছিস… আমি আদিত্য…"

"কোন আদিত্য…"

"ঐন্দ্রিলা… আমি আদিত্য… আমি তো নম্বর change করিনি… চিনতে পারছিস না… "

"Sorry… আমি সত্যি চিনতে পারছি না… কোন house থেকে বলছেন বলুন… আসলে আজকের content full আছে… আপনি আমায় mail করে রাখুন"

"না মানে… আমি…"

"আমি না একটু ব্যস্ত আছি… আপনি mail করে রাখুন…"

ফোনটা কেটে যায়… আদিত্য অবাক হয়ে যায়… ঐন্দ্রিলা ওকে চিনতে পারল না… ঐন্দ্রিলা ওর আদিত্যকে চিনতে পারল না…ঠিকই আছে… আদিত্য এটাই deserve করে… সব গুলো ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়… প্যারডির খাতাটাও…

একটা কাচের জানলার পাশে সাদা ধবধবে চাদর পাতা একটা বিছানা… মেয়েটার হাতের পাশে ফোনটা রাখা… বাইরে জানলা দিয়ে হালকা রোদ এসে পড়ছে ওর অনেক গুলো চ্যানেল করা ডান হাতের ওপর…

আসল রোদ নয়… নকল রোদ…এই রোদকে দেখা যায়… ছোঁয়া যায় না… ঐন্দ্রিলা বন্দি… feild repoter তো… কী করে রোগটা ওকেও ধরে নিল বুঝতে পারেনি… যখন বুঝেছে তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে… হয়তো আর কটা দিন এই নকল রোদটাই ওকে দেখবে…

আদিত্য ভালো থাকুক ওকে ঘেন্না করে….

More From Author See More