-হ্যালো।
-দিয়া!
-ফোন করেছিস কেন?
-তার চেয়েও বড় কথা তুই আমায় আনব্লক করেছিস কেন? অভ্যেসটা ঘেঁটে দিলি তো?
-মানে?
-শেষবার তোর আর আমার কোথায় কথা হয়েছিল মনে আছে?
-আমি আর তুই লেকের ধারে বসেছিলাম। বিকেল ফুরিয়ে আসছিল। লেকের জলে সূর্য ডুবে যাচ্ছিল একটু একটু করে। ঠিক যেমন করে আমাদের সম্পর্কটা ডুবে যাচ্ছিল। জানিস দিয়া, যখন মানুষের জীবনে কোনও ঘটনা ঘটে নেচার ঠিক তার মতো করে ব্যাকগ্রাউন্ড ক্রিয়েট করে। পুরো মাপে মাপে। এই যেমন ধর খুব মনকেমনের রাতে আধখানা চাঁদ ওঠে, আলতো একটা হাওয়া দেয়, সে হাওয়ায় গা শিরশির করে কিন্তু চুল ওড়ে না আর কোথা থেকে যেন মাধবীলতার গন্ধ আসে। কেউ জানে না সে গাছ কোথায়, তবু গন্ধ আসে উথালপাতাল। তার পর ধর খুব খুশি হলে ভরদুপুরেও তাপমাত্রা খানিক কমে যায়। আর কেউ না বলে চলে গেলে সুর্য ডুবে যায় সময়ের আগে।
-আমি এসব শুনতে চাই না সুমন। তুই কী অভ্যেসের কথা বলছিলি?
-হ্যাঁ হ্যাঁ। ওটা বলতে গিয়েই এ সব বলে ফেললাম। আসলে তুই সেই যে সে দিন চলে গেলি আর আমি তোকে ফোনে পেলাম না। ঘন্টাখানেক পর বাড়ি পৌঁছেছিস কি না জানতে ফোন করে দেখলাম...
-তুই ব্লকড।
-হ্যাঁ। তার পর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সর্বত্র তুই আমাকে ব্লক করে দিলি। তোর মায়ের ফোন নম্বর ছিল আমার কাছে সেটাও...
-ব্লক করে দিয়েছিলাম।
-একজ্যাক্টলি। তোর বন্ধুদের থেকে খবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম তারাও কিছু বলতে পারল না।
-আমি ওদের বারণ করে দিয়েছিলাম।
-আমিও সে রকমটাই আন্দাজ করেছিলাম। তার পর মাঝে খবর পেলাম তুই না কি দিল্লি চলে গেছিস।
-গেছিলাম। কিন্তু এখন কলকাতায়। আমি দিল্লি থেকে ফেরার দু দিন পরেই লকডাউন ডিক্লেয়ারড হল। তুই কিন্তু অভ্যেসের কথাটা এখনও বললি না?
-এখনও আমায় নিয়ে তোর কৌতূহল আছে?
-লকডাউনে এত বোর হয়ে গেছি অন্য রকম কিছু দেখলেই কৌতূহল হচ্ছে। তুই অতটা ইমপরট্যান্ট না।
-সে আমি জানি। হ্যাঁ যা বলছিলাম, তুই যে আমাকে ব্লক করেছিস সেটা বোঝার পর সে দিন আমি বোকার মতো প্রায় একশো বার ফোন করেছিলাম তোকে। যেন বারবার ফোন করলেই আমি তোর ব্লক লিস্ট থেকে বেরিয়ে যাব। আসলে মাথাটা কাজ করছিল না তখন। পরের দিন মাথাটা ঠান্ডা হল।
-আর ফোন করলি না তাই তো?
-না, সত্তর বার করেছিলাম।
-মাই গুডনেস! ইউ আর ইনকরিজিবল সুমন।
-অ্যাজ অলওয়েজ। কিন্তু তার পর মাথাটা আরও ঠান্ডা হল। ফোনের ফ্রিকোয়েন্সি কমতে কমতে একে গিয়ে দাঁড়াল। গত এক বছর ধরে আমি রোজ এক বার তোর এই নম্বরটায় ফোন করি দিয়া আর ফোনটা এক বার রিং হয়েই কেটে যায়৷ বুঝি যে আমি এখনও ব্লকড। এটায় অভ্যেস হয়ে গেছিল। আজ ফোন ধরে তুই সেটা ঘেঁটে দিলি। ফোন করে না হয় আমি অন্যায় করেছি, অনধিকার প্রবেশ করেছি, কিন্তু আমাকে আনব্লক করে তুই কি তার চেয়েও বেশি অন্যায় করিসনি বল তো?
-কেমন আছিস?
-গোটা পৃথিবীটাই তো ভাল নেই দিয়া। আমি আর কী করে ভাল থাকব বল? তা তুই কলকাতায় কি কাকু কাকিমার সাথে দেখা করতে এলি?
-না। পারমানেন্টলি। দিল্লির প্রজেক্টটা শেষ।
-আচ্ছা। একটা প্রশ্ন করব?
-আচমকা আনব্লক করলি কেন আমায়?
-কেন তোর কি খুব অসুবিধে হচ্ছে? হলে বল আবার ব্লক করে দিচ্ছি।
-আহা! আবার অত খাটাখাটনি করবি কেন? যেমন আছে থাক। ইটস ওকে।
-কুকুর৷ কেন আনব্লক করেছি শুনবি? তোকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল তাই। তোকে ফোন করতামই৷ তার আগেই তুই করলি।
-তুই আমাকে নিয়ে চিন্তা করছিলি? স্ট্রেঞ্জ!
-রাইট ইউ আর। করার দরকার ছিল না। তুই যে একা থাকতেই চাস সেটা ভুলে গেছিলাম। আমি ভুলে গেছিলাম, তোর কাউকে দরকার হয় না। তুই নিজেকে নিয়েই হ্যাপি। ইউ আর দ্য সেলফিশ জায়ান্ট।
-ফর হোয়াট?
-আমি তোকে অনেক অবহেলা করেছি দিয়া। তোর যখন আমাকে দরকার ছিল আমি তোর পাশে থাকিনি। নিজেকে নিয়ে, নিজের খেয়াল খুশি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সম্পর্কটাকেও যে মাঝে মাঝে রিচার্জ করতে হয় আমি ভুলে গেছিলাম। আসলে আই টুক ইউ ফর গ্র্যান্টেড। তুই চলে যাওয়ার পর আমি সেটা রিয়াইলজ করেছি। আর তাই তো রোজ ফোন করতাম তোকে। জানতাম আমার ফোন তোর কাছ অবধি পৌঁছবে না তবু এ আমার নিজের কাছে পাপস্খালন করার চেষ্টা।
-বড় বড় কথা বলিস না সুমন। তুই একা না আমিও অনেক চেষ্টা করেছি।
-কীসের চেষ্টা?
-ন্যাগ না করার। ঝগড়া না করার। গত এক বছরে দিল্লিতে আমি দুটো প্রেম করেছি কিন্তু কারও সাথে ঝগড়া করিনি জানিস? ক্যান ইউ বিলিভ ইট?
-না মানে ব্যাপারটা সত্যিই অবিশ্বাস্য কিন্তু দুটো প্রেম করেছি মানে? আর করছিস না?
-না। ব্রেক আপ।
-সে কী? তুই তো ঝগড়া করিসনি তা হলে ব্রেক আপ কী করে হল?
-ঝগড়া করিনি তো। তোকে ব্লক করার পর আমি নিজের কাছে প্রমিস করেছিলাম আর কখনও ঝগড়া করব না। কিন্তু ছেলেগুলো তো আসলে জানোয়ার। এমন মাথা গরম করিয়ে দিয়েছিল একজনকে চড় দিয়েছি আর একজনের মাথায় বোতলের বাড়ি। ব্যাস ব্রেক আপ।
-মাই গুডনেস!
-আসলে কী জানিস সুমন এই লকডাউনটা আমাদের সবার অওকাত দেখিয়ে দিয়েছে। একা থাকতে থাকতে আমরা বুঝতে পেরেছি আমরা আসলে কত বোকা৷ কত ছোট ছোট ইগো নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু দিনের শেষে আমরা কেউ একা থাকতে চাই না। একা থাকতে আমরা ভয় পাই। তুই বলতিস না, আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি, সেই রকম ব্যাপার। এই লকডাউনটা হওয়া বোধহয় দরকার ছিল।
-হ্যাঁ। আর ব্লক ডাউনটাও। না হলে আমিও কী জানতাম তোকে আমার এতটা দরকার?
-শাট আপ।
-বলছি, ব্লক ডাউন তো উঠে গেল। আমাদের লকডাউনটাও উঠে যাক না কি?
-এ সব বড় বড় সিদ্ধান্ত এক কথায় নেওয়া যায় না সুমন বাবু। পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। দেখছিস না পিএম কেমন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকছেন, সব স্টেটের সিএমদের সাথে আলোচনা করছেন। আরে লকডাউন তোলা কি অত সোজা রে?
-তা ঠিক। তবে উঠবে তো?
দিয়াঃ হ্যাঁ। সে তো উঠতেই হবে। কদ্দিন আর একা থাকবে মানুষ!
-ব্যাস ব্যাস। এই অনেক। আচ্ছা শোন, একটা কথা বলবি?
-ওই যে দুটো প্রেমিকের কথা বললি, ওরা কি আমার থেকেও ভাল চুমু খায়?
-ফাক ইউ।
-আই লাভ ইউ।