লকডাউনের গপ্পো ৫

হ্যালো!

কী রে? হল?

কী মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই কী? টানা তিনদিন ধরে কী নিয়ে আলোচনা করছি আমরা? ফোন করেছিস?

এই তো আজকেই করব।

তুই ফোনটা রাখ। আমি জাস্ট নিতে পারছি না তোকে।

রাগ করছিস কেন? আজকেই করব বললাম তো।

রাগ করব না? সাত ক্যালানের এক ক্যালানে শান্তনু অবধি লক ডাউনের সেন্টু মেরে অস্মিতাকে তুলে নিল, আর তুমি বসে বসে আঁটি পাকাচ্ছো? বলছি এতবার করে, মেয়েটা তোর দিকে ঢলেই আছে, জাস্ট একটু সাঁকো নাড়ালেই হবে। কোনও কথাই কানে তুলছিস না। তুই প্রেম করবি, সব দায় যেন আমার।

মুখে একটু স্যানিটাইজার দে বুঝলি। পুরো ধাপার মাঠ।

তুই ঘরে বসে আছিস কেন? রাস্তায় বেরিয়ে পড়। মাস্ক ফাস্ক কিচ্ছু লাগবে না। তোর কোনও ভয় নেই। ছাগলদের করোনা হচ্ছে না।

আমায় খিস্তি করছিস? তুইও তো অভীককে বলতে পারিসনি। তার বেলা?

আমার কথা অন্য, নীল। অভীকের দিক থেকে কিছু নেই আমি শিওর। কিন্তু তোর গ্রাউন্ড রেডি। শ্রীপর্ণা তোকে পছন্দ করে, আই সোয়্যার।

কী করে শিওর হচ্ছিস অভীক তোকে পছন্দ করে না?

আমার প্রেমে পড়া কারোর পক্ষে সম্ভব না, জানিস তো। আমি কালো। বাজে দেখতে। বোলতার চাকের মতো নাক। আমাকে কে ভালোবাসবে?

বড্ড ভাট বকিস।

তুই জানিস ভাট বকছি না। সবাই জানে সৌন্দর্য একটা স্কিন ডিপ জিনিস। নারকেলের ছোবড়া। তবু কিছুই কি পাল্টায়? কয়েক বছর পর মধ্যে চাঁদে লোকে পিকনিক করবে, তাও সংসারের এই সার সত্যটি পালটাবে না। ওসব নিয়ে আমি ভাবি না। তুই আমার কথা শোন। শ্রীপর্ণাকে ফোনটা কর। এটাই সুযোগ। এখন সবাই ঘরে আটকে। কাজকম্মো নেই। ভয়ে টাকে উঠে যাচ্ছে। মনটা এমনিই তলতলে হয়ে আছে। জয় মা বলে পতাকা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়।

ধুর। বাঁচব কিনা তারই ঠিক নেই।

সেইজন্যই তো আরও উচিত বলে দেওয়া। প্লিজ। বলে দে। আমাকে একটু দয়া কর। তোদের নান্টু ঘটক হতে গিয়ে আমার হাড় মাস কালি হয়ে গেল।

শ্রীপর্ণা আমাকে পছন্দ করে বলছিস?

এতক্ষণ ধরে কি জুলু ভাষায় কথা বলছি? শোন আমি ফোন রাখছি। আমার আর ভাল্লাগছে না। তুই যা খুশি কর। শুধু আমাকে বারবার ফোন করে হ্যাজাস না।

শোন না। সৌমী।

তাড়াতাড়ি বল। আমি যোগা করতে যাব।

শ্রীপর্ণাকে আমি ভালোবাসিনা।

লক ডাউনের আবিষ্কার। ওটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিল।

ইয়ার্কি না। অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, শ্রীপর্ণাকে আমি মিস করছি না। আমি আরেকজনকে মিস করছি। টেরিবলি মিস করছি।

কে? মধু?

বলব। তার আগে তুই কথা দে তুই অভীককে তোর ফিলিং-এর কথা জানাবি।

এ আবার কেমন শর্ত?

প্লিজ বল। তাহলে আমি নামটাও তোকে বলব আর তাকে জানিয়েও দেব। আজকেই।

পাঁঠার মতো কথা বলিস না।

সৌমী, অভীকের উত্তরটা আমার জানা দরকার।

উত্তর তুই জানিস নীল। না জানলেও তোর উত্তর খুঁজে দেবার জন্য আমি অপমানিত হতে পারব না। আমি অনেকের বন্ধুত্ব পেয়েছি এটাই আমার কাছে যথেষ্ট। আমি আর কিছু এক্সপেক্ট করি না কারোর থেকে। আমি …

জানি জানি। তুই কালো, কুচ্ছিত। তোর নাক বোলতার চাকের মতো। ঠোঁট দেখলে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদের কথা মনে পড়ে। তোর ভুরু আমাজনের জঙ্গল, যেখানে দেব গিয়ে অ্যানাকোন্ডা মেরে এসেছে। জানি।

ব্যাস। সবই তো জানিস। এন্ড অব ডিসকাসন।

তুই কি অভীককে সত্যিই ভালবাসিস?

কী করবি জেনে? অভীককে কনভিন্স করাবি?

আমি জানি তুই অভীককে ভালবাসিস।

কংগ্যাচুলেশন। আপনি ক পেয়েছেন।

তুই কি হ্যান্ডিক্যাপড কার্ড করিয়েছিস?

তুই কি জানিস তুই অন্ধ?

কী বলতে চাইছিস একটু খুলে বলবি?

বলিনি এখনও? আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে।

ঘরে আটকে থেকে থেকে তোর টাকে উঠে গ্যাছে। কী বলছিস ক্লিয়ার করে বল। আমি হেঁয়ালি বুঝি না।

তুই সৌমী। আমি তোকে মিস করছি।

নীল, দিস ইজ টু মাচ। প্লিজ এইসব ইয়ার্কি করিস না। প্লিজ। কারোর দুর্বল জায়গা নিয়ে খেলতে নেই।

ইয়ার্কি করছি না বিশ্বাস কর। আমিও তো এতদিন জেনে এসেছি তোর সঙ্গে বন্ধুত্বই করা যায় শুধু, ভালোবাসা যায় না। কিন্তু কী করব বল। ঝড়ের মতো এসে পড়ল। কিন্তু এটা কি একটা সময় হল আসার, তুই বল? আমি কী করব এখন? কবে দেখা হবে জানি না। আদৌ দেখা হবে কিনা সেটাও জানি না। আমি এখন কী করব সৌমী?

নীল, তুই …

কিন্তু এটাও সত্যি যে লকডাউন না হলে টেরই পেতাম না। সৌমী? চুপ করে গেলি কেন?

আমার কাছে বন্ধুত্ব খুব দামি জিনিস নীল। সম্ভবত সবচেয়ে দামি জিনিস।

আমি কি কিছু চেয়েছি? দরজায় এসে দাঁড়ানো মানেই ভিখিরি নয়, সৌমী। তুই অভীককে ভালোবাসিস বাস। তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। অভীক ইজ এনিওয়ে আ লুজার। গালিব অভীকের জন্য একটা লাইনও লেখেননি। আমার জন্য লিখেছেন। আ হি জাতা উয়ো রাহ পর গালিব, কোই দিন অওর ভি জিয়ে হোতে। সৌমী? কী হল? শুনতে পাচ্ছিস?

পাচ্ছি।

তুই কাঁদছিস?

তুই কি জানিস তুই খিস্তিতে যতটা ফ্লুয়েন্ট, মিথ্যে কথায় ততটাই খাজা?

জানি না।

আবার দেখা হবে, বল?