কলেজ স্ট্রিটে লকডাউন, সংকটে বইয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই; সাহায্যে এগিয়ে এলেন তরুণরা

কফিহাউসের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়াই দায়। সারি সারি বইয়ের দোকান দুধারে। দোকানে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ভিড়, বই কিনে নিয়ে কফি হাউসের ভেতরে কোনো প্রেমিককে বই দেখাচ্ছে তার প্রেমিকা, কলেজ স্ট্রিটের চেনা দৃশ্য খানিকটা এরকমই। অথচ বইপাড়ায় বই কেনাবেচার ব্যস্ততা নেই প্রায় একমাস হয়ে গেল। করোনার হাত থেকে রেহাই পেতে বন্ধ হয়েছে সমস্ত বইয়ের দোকান। জনমানবহীন রাস্তার ধারে দোকানগুলো খাঁ খাঁ করছে, নেই বই কেনার ডাক কিংবা কলেজ থেকে ফেরার পথে প্রিয় গল্পের নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ। ভালো নেই কলকাতা, তাই ভালো নেই কলেজ স্ট্রিটও।

আর যারা এই বইয়ের সঙ্গেই পেশাগত ভাবে যুক্ত? নিজেদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মুদ্রণ, ডিটিপি, বই বিক্রি করা, প্রুফ রিডিং বা বই বয়ে এনে দেওয়াকে? কেমন আছেন তাঁরা?

দীর্ঘ এক মাস হয়ে গেল, একটি পয়সারও মুখ দেখেননি এইসব মানুষ৷ আর এঁদের সাহায্য করতেই এবার এগিয়ে এল 'চৌরঙ্গী' পত্রিকা এবং বাংলা লিটিল ম্যাগাজিন ফোরাম। যৌথ উদ্যোগে বইয়ের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে এলেন সোহম দাস, অর্পণ গুপ্ত, পার্থ ঘোষ এবং আরও অনেকে।

স্যোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেই আবারও এমন উদ্যোগ দেখা গেল এ-রাজ্যে। যেহেতু অক্ষরের সঙ্গে যুক্ত মানুষদেরকে সাহায্য করা হচ্ছে, তাই এই উদ্যোগটির নাম রাখা হয়েছে "অক্ষরবৃত্তে বন্ধুতা"। প্রহরকে এমনটাই জানালেন এই উদ্যোগের অন্যতম কর্মী সোহম। 'চৌরঙ্গী' পত্রিকার এমন একটা উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তাভাবনা বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল, আর তার সঙ্গে এবার যুক্ত হল বাংলা লিটিল ম্যাগাজিন ফোরামও। লিটল ম্যাগাজিন শুধু যে সাহিত্য নয়, তার যে একটা সমাজভাবনা থেকে উঠে আসার ইতিহাস আছে, সেই সামাজিক দায়িত্বের দৃষ্টিভঙ্গিটাই এখানে কাজ করছে। এমনটাই বললেন সোহম।

ইতিমধ্যেই চারজন মানুষের কাছে অর্থ সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে 'চৌরঙ্গী' পত্রিকার পক্ষ থেকে৷ তাঁরা কেউ হয়তো মুদ্রণ বা কেউ পেশাগত ভাবে বইয়ের সঙ্গেই নিজেকে নিযুক্ত রেখেছেন৷ চৌরঙ্গী থেকে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকেও সাহায্য করা হচ্ছে, এবং বছরভর থাকবে এই উদ্যোগ, জানালেন সোহম। উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকেও, স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার করে উঠে এসেছে বেশ কিছু অর্থ। তা দিয়েই সাহায্য পৌঁছে যাবে আরও অনেকের কাছে।

শুধুমাত্র কলকাতাতেই নয়, রাজ্যের আরও অনেক শহরে বা গ্রামে যে-সমস্ত মানুষ বই সংক্রান্ত বিভিন্ন পেশায় যুক্ত, তাঁদেরও সাহায্য করা হবে যথাসম্ভব। চৌরঙ্গী থেকে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকেও সাহায্য করা হচ্ছে, এবং বছরভর থাকবে এই উদ্যোগ।

অতিমারীর কারণে বিপর্যস্ত অক্ষরকর্মীদের জন্যে এমন উদ্যোগ যে মানুষ বহুদিন মনে রাখবেন, তা বলাই বাহুল্য। এখনও নিশ্চিত নয়, আরও কতদিন এভাবে রোজগারহীন জীবন কাটাতে হবে তাঁদের। কিন্তু সকলেই যদি যদি অল্প অল্প করে কিছু সাহায্যের মাধ্যমে এগিয়ে আসেন, তাহলে অন্তত সেইসমস্ত মানুষদের মুখের হাসিটুকু যে অমলিন থাকবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।