আড়ংঘাটায় নিজের গ্রামের পুকুরপাড়ে বসে ছিলেন চঞ্চল কুমার মোদক। বিকেলের দিকে এলাকাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকাই থাকে। তবে সেদিন বেশ কিছু কম বয়সি ছেলেমেয়ে এসে ভিড় করেছে। কথায় কথায় জানা যায়, তারা এসেছে পাশের গ্রাম পানিখালি থেকে। কেন? তারা এসেছে একটা সিনেমা বানানোর জন্য। সম্বল বলতে শুধুই মোবাইল ফোন। আর তাতেই দল বেঁধে সবাই নেমে পড়েছে। হ্যাঁ, শহর কলকাতায় এমন দৃশ্য খুব বিরল নয়। কিন্তু মফঃস্বল ছাড়িয়ে আরও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন দৃশ্য সত্যিই অবাক করে।
“ওরা একসময় এসে আমাকে ধরল। কীভাবে এডিট করতে হয়, কীভাবে টেক নিতে হয় সব শিখিয়ে দিতে হবে। আমি বললাম, আমি শেখাব কী রে! তাতে বলল, না এত বড় একটা কাজ যখন আমি করেছি, তখন ওদের কিছুটা শিখিয়ে দিতেই হবে।” নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন চঞ্চল কুমার মোদক। আর বড়ো কাজটা হল, ‘দুধপিঠের গাছ’ সিনেমা। চঞ্চল মোদক এই সিনেমার অনেকজন প্রযোজকের একজন। আসলে শুধু চঞ্চলবাবু তো নন, আড়ংঘাটা গ্রামের প্রতিটা মানুষই যে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন সিনেমাটা। আর তারই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের গ্রামেও।
“শুধু ওরাই তো নয়; বহিরগাছি, পানিখালি, বগুলা, কালিনারায়নপুর সব গ্রাম থেকেই ছেলেমেয়েরা এসেছে এই আড়ংঘাটায় শুটিং করতে। আড়ংঘাটা হয়ে উঠেছে রীতিমতো পিকনিক স্পট। কলকাতা শহর থেকেও অনেক পরিচালক আসতে চেয়েছেন। তবে আমরা বলে দিয়েছি, আগে ‘দুধপিঠের গাছ’। তার মুক্তির আগে অন্য কোনো সিনেমা নয়।” বলছিলেন চঞ্চলবাবু। তবে এইসব ছেলেমেয়ের তৈরি সিনেমা তো আর বাণিজ্যিক প্রয়োজন মাথায় রেখে নয়। এদের বরং উৎসাহ দিতেই আগ্রহী তাঁরা। নিজেরাও যতটুকু শিখেছেন, আর ভিত্তিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
ছেলেমেয়েদের এই উৎসাহ দেখে খুশি পরিচালক উজ্জ্বল বসুও। তিনি বলছেন, “ছেলেমেয়েরা যে অহেতুক সময় নষ্ট না করে, বদ সঙ্গে না পড়ে সৃষ্টিশীল কাজের দিকে এগিয়ে আসছে, এতে তো ভালোই হচ্ছে।” তবে এমনটা হবে ভেবে কাজ শুরু করেননি তিনি। “একটা গ্রামকে একসঙ্গে নিয়ে সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম। পুরো উদ্যোগটাই নতুন। ফলে অনেক সম্ভাবনাই থেকে যায়। তার খানিকটা এখনই দেখা যাচ্ছে। খানিকটার প্রকাশ হয়তো কিছুদিন পরে হবে।” বলছিলেন তিনি।
আসলে একটা গোটা গ্রাম যদি হঠাৎ বদলে যায় সিনেমার ইউনিটে, তাহলে তো তা নজর কাড়বেই। “সারাদিন লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন শুনতে শুনতে সেটার সঙ্গেই নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে ওরা।” বলছিলেন উজ্জ্বল বসু। আর চঞ্চল মোদকের কথায়, “সিনেমার তারকাদের দেখে অনুকরণ তো অনেকেই করে। এরাও তেমনই করছে। যেভাবে দেখেছে কাছ থেকে।” সব মিলিয়ে যা হচ্ছে, তা যে এক অসামান্য ঘটনা, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সিনেমার মুক্তির দিনও তো এগিয়েই এল। ‘দুধপিঠের গাছ’ বাংলা সিনেমার জগতে যেমন এক বাঁকবদল, তেমনই বাঁকবদল আড়ংঘাটার গ্রামীণ জীবনেও।
Powered by Froala Editor