প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট্ট রাজ্য মেঘালয়। এমনকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য মেঘালয়ের রাজধানী পরিচিত ‘স্কটল্যান্ড অফ ইস্ট’ নামে। বছর দেড়েক আগে সংবাদপত্রে জায়গা করে নিয়েছিল মেঘালয়ের (Meghalaya) আরও একটি ঐতিহ্য। আর তা হল লিভিং রুট ব্রিজ (Living Root Bridge)। জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়েই তৈরি এই আশ্চর্য সেতুর কারণে ইউনেস্কোর অস্থায়ী ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জায়গা পেয়েছিল মেঘালয়। তবে পরিচর্যার অভাবে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে উঠেছিল তাদের অবস্থা। এবার ধীরে ধীরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে প্রাচীন এই ব্রিজগুলিকে।
২০১৪ সালেই এই সেতুগুলি সংরক্ষণের প্রকল্প নিয়েছিলেন মেঘালয়ের এক কিশোর মর্নিংস্টার খোংথাও। তারপর ধীরে ধীরে একাধিক অলাভজনক সংস্থা হাত মিলিয়েছিল তাঁর এই কাজে। এসেছিল বৈদেশিক বিনিয়োগও। শুরুটা হয়েছিল রাংথাইলিয়াং নামের ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারাই ছিলেন এই প্রকল্পের রূপকার। তবে গোটা গারো ও খাসি পাহাড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র সেতুর চেহারা রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষেও। সেই অভাব পূরণ করে দেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের স্বেচ্ছাসেবীরা। ২০১৭ সালে গড়ে ওঠে ‘লিভিং রুট ব্রিজ’ সংরক্ষণ কমিটিও।
সাধারণ এই ধরনের ব্রিজ তৈরি হয় ফিকাস ইলাস্টিকা নামের এক বিশেষ রাবার গাছের শিকড় দিয়ে। যতদিন গাছ জীবিত থাকে, ততদিনই ভারবহন করার ক্ষমতা থাকে এই শিকড়ের। তারপর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এই সেতু। বাড়তে থাকে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা। তাই পুরনো শিকড় কেটে নতুন করে ব্রিজের দু’পাশে রোপণ করতে হয় গাছের চারা। তারপর যত্ন সহকারেই তাদের শিকড় দড়ি বেঁধে নিয়ে যেতে হয় খাদের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। যা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ তো বটেই। একটি গাছের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধি হতেই লেগে যায় ৪-৫ বছর সময়।
বিগত ৮ বছর মেঘালয়ে সবমিলিয়ে কুড়িটিরও বেশি সেতুকে সংরক্ষিত করা হয়েছে নতুন করে। সেই তালিকায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে পূর্ব খাসি পার্বতের মাওকির্নট গ্রামের লিভিং-রুট-বিজ। ১৭৫ ফুট দীর্ঘ এই ব্রিজটি সে-রাজ্যের এক আইকনিক স্থানই বটে। সবচেয়ে দীর্ঘতম শিকড়-নির্মিত সেতু হওয়ার পাশাপাশি তা দ্বিতল। ৫০-৬০ জন মানুষের ভার অনায়াসেই বহন করতে পারে এই সেতু। নতুন করে সংরক্ষণের পর আগামী ৫০০ বছর এই সেতু কাজ করতে সক্ষম হবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা…
Powered by Froala Editor