রয়্যাল লিভার বিল্ডিং, আলফ্রেড জোন’স মেমোরিয়াল, সপ্তম এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল, জন লেননের বাড়ি, অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম— গোটা শহরের ছত্রে ছত্রে যেন লুকিয়ে রয়েছে সোনালি ইতিহাসের খণ্ডচিত্র। ব্রিটেনের লিভারপুল শহর। এবার ৮০০ বছরের পুরনো এই শহরই হারাতে চলেছে তার হেরিটেজ তকমা। কেন না, নগরীর ঐতিহ্য রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ লিভারপুল। আর সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত ইউনেস্কোর।
২০০৩ সালের কথা। ৬টি ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য ইউনেস্কোর দ্বারস্থ হয়েছিল লিভারপুলের সিটি কাউন্সিল। জমা পড়েছিল মনোনয়ন পত্রও। আর তার ভিত্তিতেই লিভারপুলকে ২০০৪ সালে হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শাখা সংস্থাটি। তবে প্রত্যাশার থেকে যেন খানিকটা বেশিই উপহার পেয়েছিল লিভারপুল। শহরের নির্মাণগুলির পর্যালোচনা করে ৮টি স্থাপত্যকে হেরিটেজের তকমা দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। যার মধ্যে রয়্যাল রিভার বিল্ডিং পেয়েছিল ‘গ্রেড ওয়ান’ তকমা। আর লিভারপুলকে ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করে ইউনেস্কো।
ইউনেস্কোর এই শিরোপা পেতে যে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায়— তা আর নতুন করে বলার নেই কিছুই। কিন্তু এমন এক শিরোপা হঠাৎ করে হারাতে বসেছে কেন শতাব্দীপ্রাচীন ব্রিটিশ শহরটি?
২০১২ সালের কথা। লিভারপুল কাউন্সিল থেকে পাশ হয়েছিল লিভারপুল ওয়াটার প্রোজেক্ট। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বদল আসত শহরের মূল পরিকাঠামোতে। বদলে যেত শহরের ইতিহাস ঘেঁষা ধাঁচটাই। ওয়াটার প্রোজেক্টের ব্লু প্রিন্ট প্রকাশ পাওয়ার পরেই সতর্কতা জারি করেছিল ইউনেস্কো। সেই নির্মাণ শুরু হতেই বিপর্যস্ত ঐতিহাবাহী শহরের তালিকায় স্থান হয় লিভারপুলের।
আরও পড়ুন
গানের সূত্রে ঢুকে পড়বে পশ্চিমি পুঁজিবাদ; কিউবায় লেননকে নিষিদ্ধ করলেন ফিদেল কাস্ত্রো
তবে এরপরেও থেমে থাকেনি লিভারপুলের ‘উন্নয়ন’। আর তার জেরেই ধ্বংস হতে চলেছে শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য— ২০১৭ সালে এমনই অভিযোগ তোলে ইউনেস্কো। পাশাপাশি তুলনামূলক দরিদ্র জনবসতি এলাকার সামগ্রিক বিকাশের খামতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল আন্তর্জাতিক সংস্থাটির। তখনই জারি করা হয় হুঁশিয়ারি। এবার তার ঠিক তিন বছর পর বেশ কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে চলেছে সংস্থাটি।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পরেই ইউনেস্কোর দ্বারস্থ হয়েছেন লিভারপুলের মেয়র স্টিভ রোথরাম। ভুল সংশোধনের জন্য আরও এক বছরের সময়সীমা চেয়ে ইউনেস্কোকে চিঠিও পাঠানো হচ্ছে শহরের তরফ থেকে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন ফুটবলার, রাজনীতিবিদ, স্থপতি, শিক্ষাবিদ-সহ প্রায় ৩০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বও।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যগুলিকে সংরক্ষণ করতে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করেছে লিভারপুল। সেসব নির্মাণের গঠনও যাতে অপরিবর্তত থাকে— সেটাও নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে শহরের কাউন্সিল। সেইসঙ্গে আগামী এক বছরের জন্য ব্রামলে-মুর বন্দর সংলগ্ন দরিদ্র জনবসতি এলাকার উন্নয়নেও ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। আগামী ১২ মাসের মধ্যে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞরা যাতে শহর পরিদর্শনে এসে যাতে পরিস্থিতির পুনর্পর্যালোচনা করে যান, সেই অনুরোধই রাখছেন তাঁরা। কিন্তু এই চিঠিই কি শেষ পর্যন্ত মান রক্ষা করতে পারবে ব্রিটিশ শহরটির? জানা নেই উত্তর…
Powered by Froala Editor