“মানসিক স্বাস্থ্য মানে তো শুধু একজন মনোবিদের চেম্বারে বসে একজন রোগীর চিকিৎসা নয়। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা একটি বড়ো সমস্যা।” বলছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় (Anuttama Bandyopadhyay। পাশেই বসেছিলেন রত্নাবলী রায় (Ratnaboli Roy)। হাসিতে সস্নেহ প্রশ্রয় তাঁর। মুগ্ধ সামনে বসে থাকা দর্শক-শ্রোতারাও।
সত্যিই তো, এই জায়গাটা থেকেই শুরু হয়েছিল ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’-র (Anu-Songe Ratnaboli) পথচলা। বছরখানেক আগের কথা। গতবছর সেপ্টেম্বর মাস, সারা পৃথিবী তখন কোভিড আতঙ্কে ঘরবন্দি। চিকিৎসকদের চেম্বারের দরজাও বন্ধ। অথচ অতিমারীর মতোই ছড়িয়ে পড়ছে মানসিক সমস্যা। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে এসেছিলেন অনুত্তমা-রত্নাবলী। অনলাইনেই শুরু হয়েছিল নানা অনুষ্ঠান।
অতিমারীর সময় বিপন্ন মানুষদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছিল এই অনুষ্ঠান। কেবলমাত্র মনোরোগের চিকিৎসা নয়, বরং একটি বৃহত্তর পরিসর ধরতে চেয়েছিলেন অনুত্তমা এবং রত্নাবলী। “চিকিৎসকের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোবিদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সেইসঙ্গে মানবাধিকার কর্মীর দৃষ্টিভঙ্গি – এই তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিকে একসঙ্গে নিয়ে আমরা এই অনুষ্ঠান শুরু করি। এই মেলবন্ধনের জায়গাটাই এই অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব।” অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলছিলেন মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার কর্মী রত্নাবলী রায়। কখনও কোভিড অতিমারী সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে বসেছে আলোচনা, কখনও আবার ঈর্শা বা আত্মহত্যার মতো প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করেছেন অনুত্তমা-রত্নাবলী। তবে এবার আন্তর্জালের সীমানা পেরিয়ে মানুষের মুখোমুখি হওয়ার পালা।
আরও পড়ুন
মাধ্যমিকের ফলাফল নিয়ে ব্যঙ্গেও লুকিয়ে প্রতিহিংসাই : অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়
আরও পড়ুন
ধর্ষণ শুধুই যৌনাঙ্গ-নির্ভর নয়; যৌনতার ভাষা শিখতে হবে প্রথমে : মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়
বাইপাসের ধারে হোটেল ভিভান্তা। তারই ব্যাঙ্কোয়েট হল দি হারমনিতে বসেছিল আজকের সভা। অতিমারী সংক্রান্ত দূরত্ববিধির কারণেই আসনসংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছিল। প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন হলের মধ্যে। আরও অসংখ্য মানুষ অনলাইনে যুক্ত থেকেছেন এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা অনলাইন আলোচনাগুলির মতোই আজকেও এই অনুষ্ঠানের শরিক ছিল প্রহর। ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’-র প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন কবি জয় গোস্বামী। জয়ের কথায়, “অনু-সঙ্গে রত্নাবলী অনুষ্ঠানে আমাদের এই মন, আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, তার বিপন্নতা এবং সেই বিপন্নতাকে পেরিয়ে মনকে সবল রাখার উপায় আলোচিত হয়। সেই আলোচনা একজন লেখককে শিক্ষিত করে, সমৃদ্ধ করে।” শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রখ্যাত বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসুও।
দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তরের ভিতর দিয়ে উঠে এসেছে নানা কথা। কেউ নিজের সন্তানের আত্মহত্যার প্রবণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, আবার কেউ নানারকম সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। অনেক বিষয় নিয়েই আগে আলোচনা হয়েছে। তবে নতুন নতুন প্রশ্নের ভিতর দিয়ে আলোচনা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। দর্শকের আসনেই উপস্থিত ছিলেন ডাঃ অনিরুদ্ধ দেব, দোলন গাঙ্গুলির মতো ব্যক্তিত্বরাও। বাকিদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাঁরাও জানিয়েছেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা। করোনা অতিমারীর সময় ওপিডি বন্ধ ছিল প্রত্যেকেরই। অথচ তার মধ্যেই দেখা গিয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। সারা পৃথিবীজুড়েই ছিল একই ছবি। এই পরিস্থিতিই ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’ অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রয়োজনীয় করে তুলেছিল। তবে কোভিড সমস্যার অনেকটা সমাধান হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি যে আজও জ্বলন্ত সমস্যা। তাই ‘অনু-সঙ্গে রত্নাবলী’-র পথচলা এখনও শেষ হয়নি।
Powered by Froala Editor