রবীন্দ্র সরোবরের ‘চিকিৎসায়’ তরল অক্সিজেন

গত অক্টোবর মাসে এক অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের সাক্ষী ছিল কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর (Rabindra Sarobar)। হঠাৎ করেই দেখা যায়, সরোবরের জলে ভেসে উঠেছে মরা মাছ। একটি নয়, একসঙ্গে ৩০টি মাছের মৃতদেহ দেখে অবাক হয়েছিলেন পরিবেশকর্মী থেকে শুরু করে সরকারি আধিকারিকরা প্রত্যেকেই। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে শুরু করে একাধিক সংস্থার রিপোর্টে জানা যায়, সরোবরের জলে অক্সিজেনের অভাবই মাছেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আর এই সমস্যার সমাধানের জন্য এবার জলে তরল অক্সিজেন (Liquid Oxygen) মেশানোর পরিকল্পনা নিল কলকাতা পৌর উন্নয়ন সংস্থা (KMDA)।

গতমাসেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে জানানো হয়, রবীন্দ্র সরোবরের একাধিক অংশে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বিপদসীমার নিচে নেমে গিয়েছে। সেখানে কোনো জলজ প্রাণীর পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সরোবরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। কলকাতা পৌর উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাই বিভিন্ন অংশে বায়ু ফোয়ারা বসানো হয়। তবে এই প্রকল্পের বিরোধিতা জানায় শহরের রোয়িং ক্লাবগুলি। ফোয়ারার পাইপের কারণে তাঁদের অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান তাঁরা। পুরসভা থেকে সঙ্গে সঙ্গে পাইপ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কীভাবে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ানো হবে, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়।

অবশেষে গতকাল পৌর উন্নয়ন সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়, সরোবরের জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে তরল অক্সিজেন মেশানো হবে। এই বিষয়ে বেশ কিছু সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে। পাশাপাশি সরোবরের জলে অন্য কোনো দূষক পদার্থ মিশছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও নেওয়া হবে। তবে ইতিমধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের মতে, সরোবরের জলে অক্সিজেনের প্রভাব কমে যাওয়ার মূল কারণ অত্যাধিক পরিমাণে পলির সঞ্চয়। ইতিমধ্যে সরোবরের নিচে পলির স্তর প্রায় ২০ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। তবে কলকাতা পৌর উন্নয়ন সংস্থার কর্তাদের মতে, এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টিকে থাকা একটি সরোবরে পলির স্তর উঁচু হওয়াই স্বাভাবিক। তবে এই সমস্যার মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।

Powered by Froala Editor