একটি সদ্যজাত চিতাবাঘ। তার মা তাকে ফেলে দিয়ে গিয়েছে, অথবা কোনোভাবে হারিয়ে ফেলেছে পরিবারকে। জন্ম থেকেই বেশ অসুস্থ। আর সেই ছোট্ট চিতাবাঘকে অতন্দ্র প্রহরায় ঘিরে রেখেছে একটি সিংহী। এমনই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো গির অরণ্য। গুজরাটের গির অরণ্যে হাতে গোনা কয়েকটা সিংহের বাস। প্রকৃতির কাছে প্রতিযোগিতায় হার মানা এই প্রাণীটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। অথচ মাতৃত্বের কোমল অনুভূতি ছুঁয়ে গেছে তার মনের গভীরে।
আরও পড়ুন
বাঘের মুখে ‘নিষিদ্ধ’ প্লাস্টিকের ড্রাম, সংরক্ষিত অরণ্যের ছবিতে চাঞ্চল্য
পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে নাকি অপরকে মেরে বাঁচতে হয়। প্রাণীদের উদবর্তনের ইতিহাস তাই রক্তের অক্ষরে লেখা। অন্য প্রজাতিকে আক্রমণ করার মধ্যেই সার্থকতা। অথচ তার মধ্যেও কিছু কিছু ছবি বেশ অবাক করে আমাদের। মনে হয় 'মানবতা' শব্দের প্রকৃত অর্থ জানা যাবে এইসব মনুষ্যেতর প্রাণীর কাছে। যেন সেরকমই একটা ছবি ধরা পড়ল গির অরণ্যে।
আরও পড়ুন
কাদায় আটকে মানুষ, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ওরাং ওটাং
এমনিতে সিংহ আর চিতাবাঘের সম্পর্ক তেমন বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। ফেলিন গোত্রের এইসব প্রাণী একে অপরকে আক্রমণ করেই বেঁচে থাকে। কিন্তু পরিবার-পরিত্যক্ত সদ্যোজাত শিশুকে আক্রমণ করার মতো নিষ্ঠুর হতে পারেনি সিংহীটি। তাই একটানা ২৯ দিন ধরে পরম যত্নে আগলে রেখেছে শিশুটিকে। অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারল না। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মারা গেছে শিশুটি। বনবিভাগের কর্মীরা প্রথমে মনে করেছিলেন, সিংহীর হাতেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। কিন্তু যখন দেখা গেল, শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই, তখন ধরা পড়ল দুই ভিন্ন প্রজাতির জীবের প্রকৃত সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই মুগ্ধ হয়েছেন প্রত্যেকে।
আরও পড়ুন
নিয়মিত খাওয়াতেন কাকের ছানাদের, পাঁচ বছর পর আশ্চর্য উপহার দিল তারাই
জন্মের সময়েই কঞ্জেনশিয়াল ফিমোরাল হার্নিয়া নিয়ে জন্মেছিল চিতাবাঘের শিশুটি। তার সিংহী 'মা' তাকে বাঁচাতে পারেনি। তবে এই ছবিটা থেকে যদি আমরা একটু কিছু শিখতে পারি, তাহলে হয়তো এই পৃথিবীর বুকের থেকে অনেককেই অকালে সরে যেতে হবে না। একে অপরের ভ্রাতৃত্বে ও মানবতায় পৃথিবীটা অনেক বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে।