Powered by Froala Editor
বাঘকে ঘাস খাওয়ানো কিংবা মালা পরানোর ইচ্ছে – অদ্ভুত যে সব পাগলামি কেড়েছে প্রাণ
১/৯
গতকাল কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় সিংহের ‘হাতে’ গুরুতর জখম হন এক ব্যক্তি। আচমকাই সিংহের খাচার লোহার রেলিং টপকে ঝাঁপ দেন পূর্ব মেদিনীপুরের গৌতম গুছাইত। প্রথমে ওই ব্যক্তির ডান পায়ে থাবা বসায় সিংহটি। তারপর পা ধরেই টেনে নিয়ে চলে এনক্লোসারের দিকে। চিড়িয়াখানার নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই ব্যক্তিকে।
২/৯
তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বাঘের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। ২০০০ সালে পাঁচিল বেয়ে ১৩ বছর বয়সী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ‘বব’-এর ডেরায় ঢুকে পড়েছিলেন এক যুবক। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত আক্রমণ করে বব। পালানোর কোনো সুযোগই পায়নি যুবকটি। তার আগেই ববের থাবায় ধরাশায়ী হয়ে যায় সে। চিড়িয়াখানার কর্মীরা যখন হাজির হন, তখন থেমে গেছে তাঁর হৃদস্পন্দন।
৩/৯
কলকাতায় তো বটেই, ভারতের বিভিন্ন জায়গাতেও বহুবার ঘটেছে চিড়িয়াখানায় বাঘ কিংবা সিংহের আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনা। ২০১৪ সালের ঘটনা। দিল্লি চিড়িয়াখানায় রেলিং-এ উঠে সাদা বাঘ দেখতে গিয়ে খাঁচার মধ্যে পড়ে যায় বছর কুড়ির এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক। প্রথমে মিনিট পাঁচেক শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর হঠাৎই আক্রমণ করে বাঘটি। থাবা দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করার পর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে এনক্লোসারে নিয়ে যায় যুবকটিকে। কর্মীরা উদ্ধারের জন্য তৎক্ষণাৎ এসে পৌঁছালেও শেষ রক্ষা হয়নি।
৪/৯
একইরকম ঘটনা ঘটেছিল তার বছর দুয়েক আগে ২০১২ সালে। সেবার অবশ্য বাঘের খাঁচায় বীরত্ব দেখাতেই ঢুকে পড়েছিলেন ৩২ বছরের এক ব্যক্তি। কামড় না বসালেও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের থাবার আঘাত ছিন্নভিন্ন করে দেয় তাঁকে। তবে চিড়িয়াখানার কর্মীদের তাড়া খেয়ে শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় বাঘটি। কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান ওই ব্যক্তি। সেবার এই নৃশংস ঘটনার সাক্ষী ছিল জামশেদপুরের টাটা স্টিল জুওলজিকাল পার্ক।
৫/৯
দু’একটি দুর্ঘটনার কথা বাদ দিলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিংস্র বন্যপ্রাণীকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে মানুষই। বাঘের মতো মাংসাশী প্রাণীকে ঘাস খাওয়াতে যাওয়া উত্যক্ত করা নয় তো আর কী-ই বা? হায়দ্রাবাদে ২০০৯ সালে এমনটাই উদ্দেশ্য নিয়ে খাঁচায় ঢুকে ছিলেন এক ব্যক্তি। নাহ্, ঘাস খায়নি খাঁচায় বন্দি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বরং ওই ব্যক্তির ডান হাতের একটি অংশ ছিঁড়ে নিয়েছিল সে। ওসমানিয়া জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি থাকার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই ব্যক্তি।
৬/৯
২০০৭ সালে গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বাঘের আক্রমণে। না, সেবার অবশ্য বাঘের খাঁচায় ঢুকে পড়েননি তিনি। লোহার তারজালির মধ্যে দিয়েই ক্যামেরা গলিয়ে বাঘের ক্লোজ শট নিতে গিয়েছিলেন তিনি। আওয়াজ করে বাঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়েই বিপত্তি। একই সঙ্গে আক্রমণ করে বসে দু’-দুটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ। খানিক হতভম্ব হয়েই আর হাত বের করতে পারেননি তিনি। বাঘের কামড়ে সম্পূর্ণ ছিন্ন হয়ে যায় বাঁ-হাত। ডান হাতেও ছিল গুরুতর আঘাত। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষ অবধি ইনফেকশনে মারা যান ওই ব্যক্তি।
৭/৯
তবে অন্যতম চর্চিত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৬ সালে। কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই। বাঘের গলায় মালা পরাতে গিয়ে বিপত্তি বাঁধান প্রকাশ তিওয়ারি এবং সুরেশ রাই নামক দুই ব্যক্তি। দুজনেই মদ্যপ অবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন ১৭ বছরের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিব’র খাঁচায়। উল্লেখ্য, কলকাতা চিড়িয়েখানার শিবাই আরেক ঘাতক শিকারি ‘বব’-এর বায়োলজিক্যাল বাবা।
৮/৯
নিজের রাজত্বে মানুষ দেখার পরেও প্রাথমিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেনি শিবা। তবে মালা পরাতে শিবার একেবারে কাছে পৌঁছে যেতেই সরাসরি প্রকাশ তিওয়ারির ঘাড়ে কামড় বসায় সে। মুহূর্তে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে আলিপুর চিড়িয়াখানা। তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় তাঁর। এমত অবস্থায় বন্ধুকে বাঁচাতে হিংস্র শিকারিকে লাথি মারেন অপর ব্যক্তি সুরেশ রাই।
৯/৯
শিবার থাবা থেকে রক্ষা মেলেনি তাঁরও। ধারালো দাঁত ক্ষতবিক্ষত করেছিল সুরেশকে। ততক্ষণে নিরাপত্তারক্ষীরা এসে পড়ায় তাঁকে রেহাই দেয় শিবা। ভয়ঙ্কর জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। কিছুদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও আইনের জাল থেকে বেরতে পারেননি তিনি। নীতিলঙ্ঘনের মামলা রুজু করা হয় তাঁর নামে।