আজ থেকে দু’হাজার বছর আগের কথা। মিশর কিংবা সিন্ধু সভ্যতার সমান্তরালভাবেই উত্তর আমেরিকায় গড়ে উঠেছিল এক আশ্চর্য সভ্যতা। মায়া সভ্যতা। প্রাচীন এই সভ্যতার প্রসঙ্গ উঠলে আবশ্যিকভাবে চলে আসে মেক্সিকোর নাম। তবে শুধু মেক্সিকোই নয়, মেসোআমেরিকান সভ্যতাটি বিস্তৃত ছিল এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালাতেও। এবার মেক্সিকোর দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট রাষ্ট্র গুয়াতেমালাতেই সন্ধান মিলল প্রাচীন নিদর্শনের।
একটি, দুটি নয়; উত্তর গুয়াতেমালার (Guatemala) মিরাডোর-কালাকমুল উপত্যকায় একই সঙ্গে চারটি প্রকাণ্ড শহরের খোঁজ পেলেন গবেষকরা। প্রতিটিতেই ছিল প্রায় ৯০০টির বেশি ঘরবাড়ি। পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত মায়া নিদর্শনগুলির মধ্যে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নত ছিল এই শহরগুলিই। এমনটাই দাবি গবেষকদের। ফলে, বলার অপেক্ষা থাকে না বিগত এক দশকে আবিষ্কৃত মায়া সভ্যতার (Mayan Civilization) নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম এই আবিষ্কার।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই আবিষ্কারের জন্য খনন করা হয় এতটুকু জমি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিই খুঁজে দিয়েছে কালের আবহে হারিয়ে যাওয়া এই শহরগুলিকে। প্রাচীন শহরগুলির সন্ধান পেতে গবেষকরা কাজে লাগিয়েছিলেন লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং সার্ভে বা ‘লিডার’-খ্যাত লেজার প্রযুক্তির। বিমান থেকে এই যন্ত্রের মাধ্যমে স্ক্যান করা হয় সংশ্লিষ্ট উপত্যকাটিকে। আর তাতেই ফুটে ওঠে প্রাচীন এই নগরীর ছবি। একদিকে যেমন তাতে কমেছে প্রত্নসমীক্ষার খরচ, তেমনই অতি অল্প সময়েই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন গবেষকরা।
উল্লেখ্য, ৬৫০ বর্গমাইল বিস্তৃত এই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গেছে ৩০টির বেশি বল কোর্ট। ১৯৫টি কৃত্রিম জলাধার এবং অসংখ্য খাল। নিকটবর্তী হ্রদের সঙ্গে এই খালের মাধ্যমেই সংযুক্ত থাকত কৃত্রিম জলাধারগুলি। পাশাপাশি প্রতিটি শহরকে যুক্ত করত উন্নত রাস্তা। বন্যার কথা ভেবেই ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু করে বানানো হয়েছিল সেগুলি। এখনও পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া দীর্ঘতম রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ মাইল। তাছাড়াও অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে ছিল আরও ৪১০টি পথ। গবেষকদের অনুমান, মায়ান ইতিহাসের মধ্য বা শেষলগ্নে গড়ে উঠেছিল এই শহরগুলি। যে-সময় এশিয়াতে অসিরীয় সাম্রাজ্য— তখনই স্বর্ণযুগ চলত এই শহরগুলিতে।
ইতিমধ্যেই লিডার প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা অঞ্চলটির প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাপ তৈরি করেছেন গবেষকরা। কিছুদিনের মধ্যে তার ভিত্তিতেই শুরু হবে খনন। প্রাচীন স্থাপত্য তো বটেই, এই অঞ্চল থেকে চুনাপাথারের ভাস্কর্য, মূর্তি এবং যুদ্ধাস্ত্রও পাওয়া যাবে বলেই আশাবাদী গবেষকরা। তাছাড়াও লিডার স্ক্যানিং-এ ধরা পড়া একটি ভগ্নস্তূপের আকার ইঙ্গিত দিচ্ছে স্টোনহেঞ্জের মতোই প্রকাণ্ড কোনো ভাস্কর্য নির্মাণের চেষ্টা করেছিল প্রাচীন মায়ানরা। অবশ্য এই পুরোটাই গবেষকদের অনুমান। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে সেই ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হলে, তবেই পৌঁছানো যাবে মূল সিদ্ধান্তে। আর সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছেন ইতিহাসপ্রেমীরা…
Powered by Froala Editor