করোনা অতিমারীর প্রভাবে বন্ধ সমস্ত ধরণের সামাজিক জমায়েত। লাইব্রেরিতে বই পড়তে যেতেও পারছেন না মানুষ। তাতে কী? লাইব্রেরিই পৌঁছে যেতে পারে মানুষের ঘরে ঘরে। হ্যাঁ, এমনই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন কেরালার পি সুকুমারন। ৬১ বছর বয়সে এসেও শরীরে ক্লান্তি নেই তাঁর। প্রতিদিন ১২ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যান পাঠকদের দরজায় দরজায়। একটি বাড়িতে সদস্যদের হাতে বই তুলে দিয়েই রওয়ানা দেন পরের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ছোটবেলায় খবরের কাগজ বিক্রি করতেন সুকুমারন। তাঁর সঙ্গে কাজ করা বাকি ছেলেরা অবশ্য সাইকেল নিয়েই ফেরি করত। কিন্তু সুকুমারন বলেন, ছোটো থেকেই তাঁর হাঁটতে ভালো লাগে। আর তাই বয়স বাড়লেও সাইকেল চালানোটা শেখা হয়ে ওঠেনি। তবে তাতে কাজ থেমে থাকেনি একেবারেই। এখন আর খবরের কাগজ বিক্রি করেন না। ১৯৭৯ সালেই তিনি যোগ দেন কুমারপুরম পাবলিক লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ানের পদে। চারিদিকে বইয়ের স্তূপ। কিন্তু এর মধ্যেও তাঁকে যে বিষয়টি সবসময় পীড়া দিত, তা হল পাঠকের অভাব। জেলাস্তরের এই পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা তখন মাত্র ৩০-৪০ জন।
সুকুমারন ঠিক করলেন, তিনি নিজেই পৌঁছে যাবেন মানুষের কাছে। বিশেষ করে কচিকাঁচা স্কুলপড়ুয়াদের কাছে। আবারও শুরু হল পথ হাঁটা। জেলার সব মানুষই তাঁকে ‘ওয়ালিং লাইব্রেরিয়ান’ নামে একডাকে চেনেন। পাঠকরা তখন পছন্দের বই বেছেও নিতে জানতেন না। সুকুমারন নিজেই বই বেছে দিতেন তাঁদের। অনেক সময় জোর করেই হাতে ধরিয়ে দিয়ে আসতেন বই। প্রথম প্রথম তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই কাজে অসন্তোষ জানালেও পরে বুঝেছিলেন এতে পাঠক সংখ্যা বাড়ছে।
মানুষের মনে বই পড়ার চাহিদা উস্কে দিতে পেরেছিলেন সুকুমারন। জেলার বহু মানুষের এখন আর বই না পড়লে রাতে ঘুম আসে না। কিন্তু এর মধ্যেই অতিমারী এসে সেই সুযোগটা কেড়ে নিয়েছে অনেকটাই। নতুন বই কিনে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই অনেকেরই। তাই আবারও পথে নেমেছেন সুকুমারন। এখন আর জোর করে বই গুঁজে দিতে হয় না হাতে। বরং পাঠকরা নিজেরাই জানান, কোন বই তাঁদের পড়তে ইচ্ছা করছে। অনেক সময় তাঁর কাছে জানতে চান, এরপর কোন বই পড়া যায়। প্রত্যেক পাঠকের রুচি অনুযায়ী বই বেছে দেন সুকুমারন। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি বইয়ের স্তূপকে এভাবেই মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
আরও পড়ুন
গোটা গ্রামই লাইব্রেরি, ব্যতিক্রমী পথচলা শুরু দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বড়বেড়িয়ায়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পড়াশোনার সুযোগ পাননি নিজে, পাটুলিতে স্ট্রিট লাইব্রেরি গড়ে ‘স্বপ্নপূরণ’ দোকানির