প্রতিবছর, জুন মাসটি গোটা বিশ্বজুড়েই পালিত হয় প্রাইড মান্থ হিসাবে। আর এই উদযাপনই মনে করিয়ে দেয় প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার মানুষদের স্বীকৃতি ও সাম্যাধিকারের। কিন্তু একদিনে তো বদলে যাওয়া সম্ভব নয় গোটা একটা সমাজের চিন্তাভাবনা। বরং, রাষ্ট্রের ক্রমাগত পদক্ষেপই একমাত্র বদলে দিতে পারে পরিস্থিতি। আর সেই জায়গাটাতেই এক দৃষ্টান্ত তৈরি করল মার্কিন প্রশাসন। সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে ন্যাশনাল পার্ক সংরক্ষণের দায়িত্ব তুলে দিল এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের হাতে।
হ্যাঁ, পুরো জুন মাসের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট রেনিয়ার ন্যাশনাল পার্ক সংরক্ষণ ও সংস্করণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের তরুণদের হাতে। এই সংস্কার কর্মসূচির প্রতিনিধিত্ব করছেন মূলত বিভিন্ন স্কুল-কলেজের এলজিবিটি শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একদিনেই তো একটা বিশাল জাতীয় উদ্যানকে চিনে উঠতে পারা সম্ভব নয়। আর এমন অভয়ারণ্যের সংস্কার প্রক্রিয়ার বিষয়ে ক’জনই বা অবগত থাকেন ছাত্রবয়সে? সেই কথা মাথায় রেখেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে ন্যাশনাল পার্কের ট্রেনিংপ্রাপ্ত এলজিবিটি প্রশিক্ষক ও গাইডের। সেইসঙ্গে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ বেতনও ধার্য করেছে মার্কিন জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
তবে এই উদ্যোগ আজকের নয়। ২০১৭ সাল থেকেই এমন ভিন্ন ধরনের এক উদ্যোগ নিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এহেন উদ্যোগের কারণ কী? রেনিয়ার ন্যাশনাল পার্কের সুপারিটেন্ডেন্ট চিপ জেনকিন্স জানাচ্ছেন, বাস্তব কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে এলজিবিটি সম্প্রদায়ের তরুণদের পরিচয় করানোই প্রধান লক্ষ্য। পাশাপাশি এই কর্মশালার সার্টিফিকেট পরবর্তীতে কাজে লাগবে তাঁদের কর্মজীবনেও। অন্যদিকে এই কাজের তাঁদের অংশগ্রহণও বদলে দেবে কর্মরত কর্মীদের মানসিকতা। জেনকিন্সের বিশ্বাস এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরাতে হলে, ক্ষমতায়ণই একমাত্র পথ।
বিগত বছরগুলিতে ধারাবাহিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা। সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে বদলানো হয়েছে সাংস্কৃতিক মূল্যায়নের কর্মসূচিও। বর্তমানে স্টোনওয়াল এলজিবিটি ন্যাশনাল মুভমেন্টের অন্যতম পীঠস্থান হয়ে উঠেছে জাতীয় উদ্যানগুলিই। পাশাপাশি তাঁদের এই অংশগ্রহণ বদলে দিচ্ছে এলজিবিটি সম্প্রদায় সম্পর্কে স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণাও। এই উদ্যোগ আগামী বছরগুলিতেও অব্যাহত থাকলে বদলে যাবে গোটা মার্কিন সমাজের চেহারা। এমনটাই অভিমত ভারপ্রাপ্ত কর্তাদের। এককথায় এই উদ্যোগ প্রান্তিক লিঙ্গ যৌনতার মানুষদের ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্তই বটে। কিন্তু আমেরিকার দেখানো এই পথে কবে হাঁটবে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেই জায়গাটাতেই…
আরও পড়ুন
এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের গণ-টিকাকরণ কর্মসূচি, পথ দেখাচ্ছে কলকাতা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
স্কুল-কলেজে এবার এলজিবিটি সংক্রান্ত পাঠ্যও, ঐতিহাসিক রায় মাদ্রাজ হাইকোর্টের