‘মানিকমামা’-কে বোম্বেতে ডাকলেন কিশোর, ৫৭ বছর পর প্রকাশ্যে সেই চিঠি

ভারতীয় চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীতের প্রসঙ্গ উঠলেই অন্যতম যাঁর নামটি ভেসে আসেই, তিনি কিশোর কুমার। একাধারে এই মাপের সঙ্গীতজ্ঞ এবং অভিনেতা খুব কমই দেখা গেছে ভারতের ইতিহাসে। ব্যক্তিগত জীবনে বেশ রসিক ছিলেন কিশোর কুমার। পাশাপাশি তাঁর বদ-মেজাজ এবং খামখেয়ালিপনাও ছিল সর্বজনবিদিত। একবার সরকারি পরিকল্পনার প্রচারে গান গাওয়ার জন্য স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধী ডাক পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। শুধু প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেননি কিশোর, কটূক্তিও করেছিলেন আধিকারিকদের। এছাড়াও নানান শিল্পীর সঙ্গে ছোটোখাটো মনোমালিন্য লেগেই থাকত তাঁর। কিন্তু কেমন ছিল তাঁর সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের সম্পর্ক?

‘চারুলতা’ তৈরির সময় সত্যজিৎ রায় বেছে নিয়েছিলেন কিশোর কুমারের নামই। কিশোরকুমারকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সত্যজিৎ। ফোন-ও গিয়েছিল। সে চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন কিশোর কুমার। তবে সেই উত্তর কোনো ‘ডাকসাইটে’ শিল্পীর লেখা নয়। বরং বিনম্র, বিনয়ী কিশোর কুমারকেই দেখা গিয়েছিল চিঠিতে। সত্যজিতের প্রতি এমনই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি। ডাকতেন ‘মানিক মামা’ বলেই।

https://www.facebook.com/AmitKumarOfficial/photos/a.413510785390133/3808085189265992/?type=3&theater

সেইসময় অন্য কোনো শিল্পীর গান গাওয়া থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন কিশোর। মুম্বাইয়ে চলছে একাধিক সিনেমার পুরোদমে শুটিং। এই পরিস্থিতিতে মানিক মামার চিঠি পেলেন। নিজের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়েই, চারুলতা’য় কণ্ঠ দিতে এক বাক্যে রাজি হলেন তিনি। এমনকি পারিশ্রমিক নিয়েও কোনো কথা বললেন না। সত্যজিতের সিদ্ধান্তের উপরেই পুরোপুরি ভরসা করলেন কিশোর।

তবে সত্যজিতের চিঠির উত্তরে নিজের ব্যস্ততার কথা সবিনয়ে জানালেন তিনি। সঙ্গে বললেন, সেই মুহূর্তে তাঁর পক্ষে কলকাতা পৌঁছনোও বেশ সমস্যার। কারণ, শুটিংয়ের পাশাপাশি তাঁর মা ভুগছেন শারীরিক অসুস্থতায়। কিশোর কুমার অনুরোধ করলেন সত্যজিৎকে, সপরিবারে তাঁর বোম্বের বাড়িতে চলে আসার জন্য। জানালেন নিজেই সমস্ত ব্যবস্থা করবেন রেকর্ডিং এবং বাদ্যযন্ত্রীদের। তবে সত্যজিতের পক্ষে বোম্বেতে যাওয়া সম্ভব না হলে, যে কোনোভাবে নিজেই কলকাতায় যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন তিনি।

পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় বাড়ি থেকেই পিয়ানোয় সুর বাজিয়ে পাঠিয়েছিলেন কিশোরকে। চারুলতার বাদ্যযন্ত্রের ট্র্যাক রেকর্ড হয়েছিল কলকাতায়। মুম্বাইয়ে থেকেই কণ্ঠ দিতে এতটুকু কুণ্ঠিত হননি কিশোর কুমার। রগচটা কিংবদন্তির মধ্যেও লুকিয়ে ছিল এক বিনম্র কিশোর। যাঁর কাছে সত্যজিৎ রায় কেবল পরম শ্রদ্ধেয়ই ছিলেন না, ছিলেন পিতৃস্থানীয় অভিভাবক।

(চিঠিটি কিশোরকুমারের ছেলে অমিতকুমারের ফেসবুক পোস্ট থেকে প্রাপ্ত)

More From Author See More