বলা হয়, সমুদ্র নিজের কাছে রাখে না কিছুই। ফিরিয়ে দেয় সবই। সে আপনার ছুঁড়ে দেওয়া প্ল্যাস্টিকের বল হোক কিংবা ভাসানের মূর্তি। শুধু তাই নয়, বহুকাল আগে ভাসিয়ে দেওয়া বোতলবন্দি চিঠিও ফেরায় সমুদ্র – এই নজিরও কিন্তু কম নেই।
অবাক লাগলেও, সমুদ্রে এমনটা ঘটে মাঝেমধ্যেই। এই তো, কিছুদিন আগেই মাছ ধরতে গিয়ে বাবা ও ছেলে খুঁজে পেলেন ৫০ বছরের পুরোনো বোতলবন্দি চিরকুট। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া নিবাসী পল ইলিয়ট ও জিয়াহ্, ইলিস্টনের কাছে মাছ ধরছিলেন। সেখানেই টালিয়া বিচে একটি বোতলবন্দি চিরকুট খুঁজে পান তাঁরা। বোতল ভেঙে দেখা গেল, সেটি মাত্র ১৩ বছর বয়সি কোনো ব্রিটিশ ছেলের লেখা। নাম – পল গিলমোর। পল ইংল্যান্ড থেকে মেলবোর্ন যাওয়ার সময় ফ্রিম্যান্টেল ও মেলবোর্নের মাঝপথে এই বোতল ভাসিয়ে দেন বলে গবেষকরা মনে করেন। লেখার তারিখ – ১৭ নভেম্বর, ১৯৬৯। তাঁর মেসেজ যদি কেউ পান, যেন মেলবোর্নের ঠিকানা সহ চিঠির উত্তর দেন – এমন আশার কথাও লিখছেন পল চিরকুটে।
বিজ্ঞানী ডেভিড গ্রিফিনের মতে, সমুদ্র স্থির নয়। তাই বোতলটি সমুদ্রের বুকে একভাবে কখনওই ভেসে থাকতে পারে না। হয়তো বহুদিন ধরে বালির নিচে চাপা পড়ে থাকার পর কোনো ঝড় আবার সেটিকে সমুদ্রের বুকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। আর এভাবেই পঞ্চাশ বছর পর উদ্ধার হল পল গিলমোরের লেখা চিঠিটি।
প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত সবথেকে পুরোনো বোতলবন্দি মেসেজ খুঁজে পেয়েছেন টনি ইলসম্যান নামে অস্ট্রেলিয়ান এক মহিলা। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ওয়েজ আইল্যান্ডের বালিয়াড়িতে ১৩২ বছর আগে জার্মান ভাষায় লেখা একটি মেসেজ খুঁজে পান তিনি। বোতলবন্দি এই চিঠির তারিখ ১২ জুন ১৮৮৬। ভেতরের লেখা বেশির ভাগই অস্পষ্ট। শুধু বোঝা যায়, মেসেজ প্রাপক যেন জার্মান কনস্যুলেটে দেখা করেন, এমন কথা লেখা হয়েছিল। কেবলমাত্র ব্যক্তিগত কারণেই নয়, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণেও বোতলে বহু মেসেজ ভাসানো হয়েছে সমুদ্রের বুকে। এই মেসেজটিও জার্মান সমুদ্রবিজ্ঞানের পরীক্ষা নিরীক্ষারই অন্তর্গত।
ভেবে দেখুন তো, কখনও আপনার কাছেও যদি ভেসে আসে শতাব্দীপ্রাচীন কোনো বার্তা, কী করবেন? চাঁদের পাহাড়ে শঙ্কর যেমন আত্তিলিও গাত্তি-র চিঠি পেয়েছিল, তেমন রোমাঞ্চ কি ঘিরে ধরবে আপনাকে? ভাবুন তো!