রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত অবশ্যই লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। তিনি কি শুধুই একজন প্রতিভাবান শিল্পী? নাকি কোনো এক অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি? শোনা যায় ভিঞ্চি নাকি এক পলকের মধ্যে বেশ কিছু পৃথক দৃশ্যপট হুবহু ছকে নিতে পারতেন। অন্তত তাঁর আঁকা ছবিগুলি থেকে তেমনটাই মনে করেন অনেকে। এইসব বিশ্বাসের সত্যতা যাচাই করতেই এক অভিনব গবেষণার কাজ করতে চলেছেন ঐতিহাসিক আলেসান্দ্রো ভেৎজোসি এবং অ্যাগনেস সাবাটো। আর এই প্রকল্পের জন্য তাঁরা বেছে নিয়েছেন ভিঞ্চির বংশধরদের ডিএনএ নমুনাকেই।
ভিঞ্চির বংশধর! কথাটা শুনতে হয়তো হঠাৎ অবাক লাগতে পারে। কারণ সকলেই জানেন, শিল্পীর কোনো সন্তান ছিল না। এমনকি তাঁর সমাধিক্ষেত্রটিরও প্রকৃত অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি, যেখান থেকে তাঁর ডিএনএ নমুনা পাওয়া যেতে পারে। তবে এর মধ্যেই শিল্পীর বেশ কয়েকজন বংশধরের সন্ধান খুঁজে পেয়েছেন ভেৎজোসি এবং সাবাটো। আজ নয়, ২০১৬ সালেই এমন ৩৫ জন বংশধরের তালিকা তৈরি করেছিলেন তাঁরা। আর এই তালিকায় ছিলেন অস্কার মনোনীত চলচ্চিত্রপরিচালক ফ্র্যাঙ্কো জেফিরেলিও। অবশ্য তিনি ২০১৯ সালেই প্রয়াত হয়েছেন। তাছাড়া পূর্ববর্তী তালিকায় ৩৫ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন পুরুষ ছিলেন। গবেষণার কাজে মূলত পুরুষ বংশধরদেরই জিন পরীক্ষা প্রয়োজন। তাই সম্প্রতি নতুন করে আরও একটি তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা। আর এতে রয়েছেন ১৪ জন পুরুষ বংশধর। এবং এই তালিকার কনিষ্ঠতম সদস্যটির জন্ম হয়েছে গত বছরই।
ভিঞ্চির নিজের কোনো সন্তান না জন্মালেও তাঁর অন্তত ২২ জন সম্পর্কিত ভাইয়ের পরিচয় পাওয়া যায়। আজও ইতালির বুকে বহাল তবিয়তে বিদ্যবান তাঁদের পরিবার। আর এইসমস্ত পরিবারের সদস্যদেরই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। কিন্তু কীভাবে কাজ করবে এই গবেষণা? ভেৎজোসি এবং সাবাটোর মতে এক্ষেত্রে কাজে লাগবে মূলত ওয়াই ক্রোমোজমের মধ্যে থাকা জিনগুলি। পুরুষানুক্রমে অন্তত ২৫টি প্রজন্ম প্রায় অবিকৃত থাকে এই জিনগুলি। আর এর ফলেই জিন রিমডেলিং-এর সাহায্যে প্রায় নিখুঁতভাবে তাঁর ডিএনএ নমুনার ম্যাপ তৈরি করাও সম্ভব।
ভিঞ্চির বংশধরেরাও নিজের নিজের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত। এমনটাই জানাচ্ছেন গবেষকরা। এঁদের কেউ বাইকপ্রেমী, কেউ কাঁচের ব্যবসায়ী। প্রত্যেকেই সমানভাবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। ফলে শিল্পীর জিনের মধ্যেই যে প্রতিভার বীজ লুকিয়ে রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই গবেষকদের। তবে তার পিছনে ঠিক কোন জিন দায়ী, তা জানতে এখনও গবেষণার প্রয়োজন। আর এই জিনগত প্রতিভা ঠিক কীভাবে সাহায্য করেছিল শিল্পীকে? তাঁর মনস্তত্ত্ব, শিল্পবোধ বা কোনো দৃশ্যকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, ইত্যাদিও কি জিনের প্রভাবেই তৈরি হয়েছিল? আর তাঁর বাঁ হাতে ছবি আঁকার রহস্যই বা কী? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে হয়তো আর খুব বেশি দেরি নেই। আর জিন রিমডেলিং-এর সাহায্যে তাঁর ডিএনএ মানচিত্র তৈরি করা গেলে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে প্রকৃত সমাধিক্ষেত্রও। সব মিলিয়ে ‘দা ভিঞ্চি ডিএনএ’ প্রকল্প ইতিহাস গবেষণায় যে এক মাইলস্টোন তৈরি করতে চলেছে, সে-কথা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন
১৮৮৭ সালে এঁকেছিলেন ভ্যান গঘ, এই প্রথম প্রকাশ্যে এল ছবি
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মোনালিসার হাসি কীভাবে এঁকেছিলেন ভিঞ্চি? পাঁচ শতক পরে সমাধান রহস্যের