“চূড়ান্ত ক্ষতির মুখেও আমরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই নতুন ওয়েবসাইট চালু করেছি আমরা। অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে বই সংগ্রহ করলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকব আপনাদের কাছে...” সম্প্রতি ফ্রান্সের বইপাগলদের কাছে এমনই মেল পৌঁছাল। প্রেরক? পৃথিবীর অন্যতম আইকনিক বইয়ের দোকান ‘শেক্সপিয়ার এন্ড কোম্পানি’। লকডাউন আর মহামারীর পরিস্থিতিতে এই বাজারে টিকে থাকাই তাঁদের দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
প্যারিসের এই বিখ্যাত বই বিপণী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ডুবে রয়েছে গত মার্চ মাস থেকেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার পর থেকেই কমেছিল পাঠকদের আনাগোনা। তারপর টানা দু’মাসের লকডাউন। মার্চ থেকে দোকানের ব্যবসা কমেছে ৮০ শতাংশ। লাভের বদলে ক্ষতি মাথায় নিয়েই হাঁটছে ঐতিহ্যবাহী এই বিপণী। বাড়ি বসেই যাতে ক্রেতারা বই পান, সেই ব্যবস্থাও নিয়েছেন তাঁরা। তবে সেখানেও কাজ হচ্ছে না সেভাবে।
এরই মধ্যে আরও এক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে চলেছে শেক্সপিয়ার এন্ড কোম্পানি। করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের কারণে আবার ৪ সপ্তাহের সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে ফ্রান্স প্রশাসন। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় চলছে নাইট কার্ফিউ। ফলে ‘কঠিন সময়’ যেন কাটছেই না এক কথায়।
১৯১৯ সালে প্রথম ঝাঁপ খোলে এই বিপণীর। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেক অনেক ঝড় বয়ে গেছে প্যারিসের বুকের ওপর দিয়ে। কিন্তু থামেনি পথ চলা। করোনা ভাইরাসের সময় সেই প্রতিকূলতারই সম্মুখীন শেক্সপিয়ার এন্ড কোম্পানি। তবে কর্ণধার হুইটম্যান মনে করছেন বই মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। এই ক্ষতির বোঝা সামলেও শুধুমাত্র পাঠকদের জন্যই খোলা রেখেছেন দোকান এবং ক্যাফে। শুধুমাত্র অনলাইনে বই বিক্রির মাধ্যমে ‘সমাজতান্ত্রিক ইউটোপিয়া’ গড়ে তোলা যায় না। এমনটাই তাঁর বিশ্বাস।
তবে পাশাপাশি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে, কর্মীদের বেতন মেটাতে বাধ্য হয়েই একপ্রকার ডিজিটাল মাধ্যমের শরণাপন্ন হয়েছেন হুইটম্যান। অনেক পাঠকই সাড়া দিয়েছেন তাঁদের ডাকে। সপ্তাহান্তে বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ইউরোর (দেড় লক্ষ ডলারের)। চিরাচরিত বিক্রিবাটার থেকে অনেকটা কম হলেও এই পরিস্থিতিতে অনেকটাই ক্ষতে প্রলেপ দিলেন পাঠকরাই। তাঁদের হাত ধরেই অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন বলে ভরসা রাখছেন হুইটম্যান। অনিশ্চয়তার মধ্যেও সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন দোকানের কর্মীরা...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ব্যাপক আর্থিক সংকট, ভারতীয় মধ্যবিত্তদের দুর্দশার ছবি উঠে এল সাম্প্রতিক সমীক্ষায়