কোবে ব্রায়ান্ট নেই। বাস্কেটবল দুনিয়ায় ইন্দ্রপতন।
অবিশ্বাস্য! অকল্পনীয়! গত সকালে ৯টার সময়(আমেরিকান টাইমে), ব্রায়ান্টের হেলিকপ্টারটি উড়ান পথে ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা সবাই মৃত। যার মধ্যে ছিল তাঁর তেরো বছর বয়সী কন্যাও। ক্যালিফর্নিয়ার ক্যালাবাসাস অঞ্চলের পাহাড়ের দিকে ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টারটি। ম্যালিবুর নিকটে অবস্থিত এই জায়গাটি লস এঞ্জেলেস থেকে খুব বেশিক্ষণের পথ নয়। ঘটনাস্থল থেকে ঘন ধোঁয়া উঠতে দেখে আবিষ্কার করা হয় ভেঙে পড়া এস-৭৬ চপার হেচলিকপ্টারটিকে।
মুখচোরা ব্রায়ান্ট বড়ো হয়ে উঠেছিলেন ইতালিতে। বাবার কাছে। ভালোবাসতেন ফুটবল। কিন্ত ধীরে ধীরে জন্মায় বাস্কেটবলের প্রতি প্রেম। সেই শুরু। দেশে ফিরে, হাইস্কুলে খেলতে খেলতেই, পেশাদার বাস্কেটবল লীগ বা এনবিএ-তে আসা। বিখ্যাত 'লস এঞ্জেলেস লেকার্স'-এ যোগ দেওয়া।
কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডানকে 'গুরু' মেনেছিলেন কোবে। খেলতেনও প্রায় তাঁরই মতো। বাস্কেটবল কোর্টে তাঁর গতি-স্ট্যামিনা-কিংবা বল হাতে অপূর্ব দক্ষতার কথা মনে রাখবে প্রত্যক্ষদর্শীরা। একেক সময় একাই জিতিয়ে দিতেন খেলা। শেষ পনেরো মিনিটে, কোবে হয়ে উঠতেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। তাবড় তাবড় খেলোয়াড়রা হার মানতেন জেদের কাছে।
২০০০ সাল থেকে ২০০২ শাকিল ও'নীলের সঙ্গে জুটি বেঁধে পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ভাঙন ধরে বন্ধুত্বে। দল ছেড়ে শ্যাক যোগ দেন 'মায়ামী'তে। কিন্তু হার মানেননি কোবে। সহ-খেলোয়াড়রা কেউ খুব 'ভালো নয়'। তবুও ফুটিফাটা দল নিয়ে আবার পরপর ২০০৯ এবং ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লেকার্স।
শুধু ক্লাব নয়, অলিম্পিকেও দু খানা সোনার মেডেল তাঁর ঝুলিতে। এমনকি উইলট চেম্বারলেনের পরে তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি একটি ম্যাচে আশি পয়েন্ট ছুঁয়েছেন।
২০১৬'য় ৩৭ বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। দীর্ঘ ষোলো বছরের বাস্কেটবল কোর্টে তাঁর নামে জুটেছে অপবাদ। নিন্দুকরা তাঁকে নানা তকমা দিয়েছে - স্বার্থপর, দাম্ভিক…। সেসব গায়ে না মেখেই লড়াই চালিয়েছেন তিনি।
২০০৩ সালে একটি যৌননিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে তাঁর নাম জনসমক্ষে আসে। কেস চলাকালীন বন্ধ হয়ে যায় খেলা। কিন্ত পরে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়। বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন কোবে।
বাস্কেটবল ফ্যানেরা তাঁর নাম রেখেছিল 'কালো মাম্বা'। আফ্রিকার সবথেকে কুখ্যাত সাপটির নামে। বাস্কেটের সামনে কোবের ড্রিবল, ছোবল দিত প্রতিপক্ষকে। ঝড়ের গতিতে কাটিয়ে যেত একের পর এক বাধা।
কোর্টের মাঝে, গ্যালারিতে অসংখ্য ফ্যানের হৃদয়েই হয়তো এরপর বেঁচে থাকবেন মানুষটা।