প্রকৃতিকে প্রাণপণে আঁকড়ে থাকতেন তিনি। আর তাকিয়ে দেখতেন জীবনের এই অদ্ভুত বিস্ময়। কাজকর্ম পোকাদের নিয়ে থাকলেও, শুধু একজন পতঙ্গবিজ্ঞানী হিসেবেই নিজেকে আটকে রাখেননি টেরি আরউইন। কিন্তু সব গল্পেরই একদিন শেষ থাকে। বিশ্ব যখন একপ্রকার থমকে আছে, পরিবেশ নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছে; তখনই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
টেরি আরউইনের কথা বললেই সামনে আসবে ১৯৮০ সালের সেই যুগান্তকারী পরীক্ষার কথা। আমাদের পৃথিবীতে যে কত প্রজাতির প্রাণী আছে, সেটা প্রমাণ করতে গিয়েই এই অদ্ভুত পরীক্ষাটি করেন। মূলত তাঁর ফোকাস ছিল পতঙ্গ। নিরক্ষীয় অঞ্চলের বনে গিয়ে তিনি কীটনাশকের ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন। একের পর এক পতঙ্গ মারা যেতে লাগল। সেখান থেকেই নিরন্তর গবেষণা করে টেরি দেখান, শুধু নিরক্ষীয় বনাঞ্চলেই প্রায় ৩ কোটি আলাদা আলাদা প্রজাতির পতঙ্গ বসবাস করে। এখানেই যদি এই সংখ্যা হয়, গোটা পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য আরও বহু বেশি! পাহাড় থেকে গভীর সমুদ্র— সব জায়গায় জীবনের গুরুত্বই তিনি তুলে ধরেছিলেন এখানে।
১৯৮২ সালে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশ হওয়ার পর সাড়া পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করেছিলেন এর মাহাত্ম্য। জীববৈচিত্র্যের ধারণাটাই বদলে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। তিনি নিজেই ৪৩৯টি নতুন প্রজাতির পতঙ্গের সন্ধান দেন। শুনলে অবাক হবেন, তাঁর নামে ৫০টিরও বেশি প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম রাখা হয়েছে। এ এক বিরল সম্মান। ফিল্ড বায়োলজির জগতে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তিসম নাম। তাঁর মৃত্যু বিজ্ঞানী মহলে শোকের ছায়া ফেলেছে। এখনকার ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা এই জীববৈচিত্র্যের জগতে বোধহয় আর থাকতেও চাইছিলেন না তিনি। পৃথিবীর এমন অবস্থা কি তাঁকেও কষ্ট দিত না!