তীব্রতায় হিরোশিমার প্রায় ২০ শতাংশ, বেইরুটের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননের খাদ্যভাণ্ডারও

আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে এই আগস্ট মাসেই সারা পৃথিবীকে চমকে দিয়ে ৯০০ পাউন্ডের পরমাণু বোমা ফেটে পড়েছিল জাপানের হিরোশিমা শহরের বুকে। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইরুট শহরে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল, তা যেন সেই পুরোন স্মৃতিকেই উস্কে দিয়ে যায়। বিশেষ করে মাশরুমের মতো আগুনের চেহারা যেন হুবহু মিলে যায় হিরোশিমার সঙ্গেই। তবে তীব্রতায় হিরোশিমার মতো না হলেও বেইরুট বিস্ফোরণের ধাক্কা সমস্ত লেবাননকেই আতঙ্কিত করে তুলেছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বেইরুট বন্দরের কাছে হঠাৎ তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। বিষ্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে যদিও এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে বন্দরের নিকটবর্তী ওয়ারহাউসে সঞ্চিত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। আনুমানিক সেখানে সঞ্চিত রাসায়নিকের পরিমাণ ২.৭ কিলোটন। সাধারণত রাসায়নিক সার হিসাবে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হলেও বিস্ফোরক হিসাবেও এর ক্ষমতা কোনো অংশে কম নয়।

বুধবার সন্ধ্যায় শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বেইরুট বিস্ফোরণে অন্তত ১৩৫ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। আর আহত অন্তত ৪ হাজার মানুষ। তার মধ্যে শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। এমনকি লেবানন সরকারের আশঙ্কা ত্রাণকার্য যত বেশি এগোবে মৃতের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকবে। তাছাড়া বিদ্যুতের অভাবে ত্রাণকার্য চালাতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুর্ঘটনা মোকাবিলা দপ্তর। অবশ্য এই পরিস্থিতিতে লেবাননের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছেছে বুধবার বিকালেই।

পাশাপাশি বিস্ফোরণের চরিত্র নিয়েও শুরু হয়ে গিয়েছে গবেষণা। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভের সমীক্ষা বলছে, বিস্ফোরণে শুধু মাটির উপরেই কেঁপে ওঠেনি, সেইসঙ্গে মাটির নিচেও ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রভাব। মোটামুটি ৩.৩ রিখটার স্কেলের মৃদু ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছিল লেবাননের মাটি। এমনকি ২৪০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাস দ্বীপ থেকেও শোনা গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দ। একমাত্র কোনো পারমাণবিক বা হাইড্রোজেন বিস্ফোরণের সঙ্গেই এর তুলনা চলতে পারে।

আরও পড়ুন
এখনও আগুন জ্বলছে অসমের বাঘজানে, বহু বন্যপ্রাণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা

অবশ্য বিস্ফোরণের তীব্রতা প্রায় হিরোশিমা বিস্ফোরণের ২০ শতাংশ হলেও তাকে চরিত্রগতভাবে পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করার বিরোধিতা করেছেন অনেক বৈজ্ঞানিক। তাঁদের মতে এটাকে একটা দুর্ঘটনা হিসাবেই মনে করা উচিৎ। কিন্তু হিরোশিমা বিস্ফোরণ ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বরং বিস্ফোরণের তীব্রতা এবং তার চরিত্র মিলিয়ে ১৯১৭ সালের হ্যালিফাক্স বিস্ফোরণের সঙ্গেই তুলনা করা চলে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই বিস্ফোরণে প্রায় ১৯০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন এবং ৯০০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। তবে সেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল সমুদ্রের বুকে দুটি জাহাজের সংঘর্ষে। কিন্তু বেইরুট বিস্ফোরণ ঘটেছে খোদ লেবাননের রাজধানীতে।

সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে লেবেননের সবচেয়ে বড় শস্যের আড়ত। দেশের প্রায় সমস্ত খাবার মজুত থাকত সেখানে। ফলে সারা দেশে আর এক মাসের বেশি খাবারের সঞ্চয় নেই। ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ এই বিস্ফোরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত। করোনা পরিস্থিতির পাশাপাশি নতুন সংকটের মোকাবিলার জন্য পৃথিবীর সমস্ত দেশের কাছ থেকেই সহযোগিতা প্রার্থনা করেছে লেবানন সরকার। আর ইতিমধ্যে বহু দেশের কাছ থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী রাওয়ল নেহেম। 

আরও পড়ুন
দু’সপ্তাহ ধরেই ছড়াচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস, এবার বিধ্বংসী আগুন অসমের বাঘজানে

Powered by Froala Editor