ছোটো থেকেই স্বপ্ন ছিল, ইঞ্জিনিয়ার হবেন তিনি। কাজ করবেন বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থায়। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পরিশ্রমও কম করেননি। গুজরাটের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ভালো নম্বর নিয়ে স্নাতকতা সম্পূর্ণ করেন মহারাষ্ট্রের গণেশ দুধনালে (Ganesh Dudhnale)। ক্যাম্পাসিং-এ চাকরিও পেয়ে যান তিনি। তবে বার্ষিক বেতনের পরিমাণ বেশ হতাশ করেছিল তাঁকে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি-দুটি কর্মসংস্থানই নয়, খোঁজখবর নিয়ে গণেশ বুঝতে পেরেছিলেন ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির জগৎ, চাকরির বাজার।
উপার্জনের জন্য ভিন্ন পথের অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল সেই থেকেই। প্রযুক্তিবিদ্যার (Engineering) শেষ বর্ষে পড়ার সময় থেকে ব্যবসা করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেন গণেশ। খানিক গবেষণা এবং সমীক্ষায় ঠিক করে ফেলেন চায়ের দোকান করবেন তিনি। আজ ভারতে ফাস্ট ফুড এবং সফট ড্রিংক্সের জগতে অন্যতম তরুণ উদ্যোগপতি গণেশ। তবে এই যাত্রাপথ খুব একটা মসৃণ ছিল না কখনোই।
নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে চায়ের দোকান খুলবে ছেলে, এমনটা চাননি গণেশের বাবা-মা। পরিবারই যেন প্রথম প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর কাছে। নিজেও মুদিখানার দোকান চালান গণেশের বাবা। ফলে, ব্যবসার উত্থান-পতনের ব্যাপারটা তাঁর নিজের চোখেই দেখা। পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেও তো খরচ হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। সেই বিনিয়োগকে কি জলাঞ্জলি দেওয়া যায় এভাবে? অবশ্য শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান তিনি।
বাবার থেকে ধার করা ৬ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়েই শুরু হয় চায়ের ব্যবসা। মহারাষ্ট্রের ভাপি রেলওয়ে স্টেশনে ছোট্ট কিয়স্ক খোলেন গণেশ। কুইস সার্ভিস রেস্তোরাঁটির নাম রাখেন ‘চায়ে মেকার’ (Chai Maker)। সাধারণ চা-এর পাশাপাশি চকোলেট, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, পেস্তা, কলা-সহ একাধিক স্বাদের চা রাখলেও, সতর্কভাবে এলাচ, আদার মতো প্রথাগত উপাদানগুলিকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন গণেশ।
আরও পড়ুন
লড়াকু বাবার পাশে অভিনেত্রী মেয়ে, 'উপহার' দিলেন চায়ের দোকান
শুরুতেই যে সাফল্যের মুখ দেখেছিলেন গণেশ, তেমনটা নয়। তবে তাঁর ভাগ্য বদলে দেন গুজরাটের এক উদ্যোগপতি প্রদীপ যাদব। মহারাষ্ট্রে ঘুরতে এসে গণেশের চায়ের স্বাদে মুগ্ধ হন প্রদীপ। গণেশকে নিজেই বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। মাস খানেকের মধ্যেই তাঁর উদ্যোগে ‘চায়ে মেকার’-এর দ্বিতীয় কিয়স্ক খোলে গুজরাটে। বিজ্ঞাপনের সৌজন্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। বর্তমানে গোটা ভারতজুড়ে ৭টি আউটলেট রয়েছে গণেশের এই প্রতিষ্ঠানের। চায়ের পাশাপাশি কফি ও অন্যান্য স্ন্যাক্সও জায়গা পেয়েছে তাঁর রেস্তোরাঁয়। নিজের এই লড়াই এবং সাফল্যকে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং পুঁজিবাদী কর্মসংস্থানদের বিরুদ্ধেই নীরব প্রতিবাদ বলেই মনে করছেন মহারাষ্ট্রের গণেশ…
আরও পড়ুন
চায়ের দোকান খুলেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন ‘চা-কাকু’ মৃদুল দেব
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চায়ের দোকানেই ওপেন লাইব্রেরি, তরুণদের হাত ধরে ‘বই-বিপ্লব’ বর্ধমানে