বাঘ আর ভাল্লুকের দেশ ভারত। মাত্র এক শতাব্দী আগেও মানুষের ঘরে এসে হানা দিত এই দুই প্রাণী। তবে চোরাশিকার এবং অরণ্যনিধনের কবলে দুই প্রাণীই আজ বিপন্ন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে কিছুটা সফল হয়েছে ভারতের বনবিভাগ। কিন্তু ভাল্লুকের অবস্থা ঠিক কেমন? সম্প্রতি ‘গ্লোবাল ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর এক পরিসংখ্যান। দেখা গিয়েছে, কঠোর আইন সত্ত্বেও দেশে ভাল্লুকের (Bear) চোরাশিকার (Illegal Trade) এবং পাচারের (Trafficking) ঘটনা কমেনি বললেই চলে। শুধু তাই নয়, ভারতে ভাল্লুক পাচার সংক্রান্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই বলেও জানিয়েছেন সমীক্ষকরা।
ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার গবেষক ক্রিস আর শেফার্ডের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে দেশের নানা প্রান্তে সব মিলিয়ে ১৪৯টি পাচার প্রক্রিয়া আটকেছে বনবিভাগ। এর মধ্যে অন্তত ২৬৪টি ভাল্লুককে পাচার করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বনবিভাগ সেই প্রক্রিয়া আটকে দিতে পারলেও ভাল্লুকদের প্রাণ বাঁচাতে পারেনি। শুধু তাই নয়, এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় দেশে ভাল্লুক পাচারকারীরা আজও পুরোদমে সক্রিয়। অথচ ভাল্লুক সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নেহাতই দুর্বল। তাই প্রতি বছর কত ভাল্লুক চোরাশিকারীদের কবলে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে, তার কোনো তথ্য নেই কোথাও।
ভারতে মূলত দুটি প্রজাতির ভাল্লুকের দেখা মেলে। একটি এশিয়ার বিখ্যাত কালো ভাল্লুক, অন্যটি শ্লথ ভাল্লুক। আইইউসিএন-এর তালিকায় এই দুটি প্রজাতিই বিপন্ন প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত। ১৯৭২ সালে ভারতে প্রথন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন লাগু করা হয়। ২০১২ সালে তৈরি হয় ভাল্লুক সংরক্ষণের বিশেষ প্রকল্প। তবে তাতে পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। আজও মধ্য ও পূর্ব এশিয়ায় ভাল্লুকের চামড়া, নখ এবং করোটির চাহিদা যে প্রচুর। চিন ও জাপানের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় এইসব অঙ্গকে মহৌষধ বলে গণ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, ভাল্লুকের মাংস খেতেও উৎসাহী অনেকে। আর তাই নেপাল সীমান্ত হয়ে প্রতি বছর পাচার হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ভাল্লুক। শেফার্ডের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নেপাল সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় উত্তরাখণ্ডেই ভাল্লুক পাচারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর রয়েছে যথাক্রমে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্র। আদৌ কি পাচারকারীদের হাত থেকে বাঁচানো যাবে ভাল্লুকদের? প্রশাসন এবং বনবিভাগের তৎপরতা ছাড়া তা কোনোদিনই সম্ভব হবে না।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চোরাশিকারের প্রভাব বিবর্তনেও, দাঁত ছাড়াই জন্মাচ্ছে আফ্রিকার হাতিরা