আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে বেরিয়ে আসা জ্বলন্ত লাভা (Lava) ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার উদাহরণ মিলেছে কয়েকদিন আগেই। লাভাস্রোতে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের আস্ত একটি জনবসতি। তবে বিষয় হল লাভাস্রোত প্রবাহিত হয়ে যাওয়ার পরে ক্রমশ নিভে যায় অগ্নিশিখাও। লাভার এই অদ্ভুত চরিত্রকে কাজে লাগিয়েই এবার বিজ্ঞানীরা তৈরি করে ফেললেন অগ্নিনির্বাপণের (Fire Extinguisher) এক নতুন পন্থা। জল বা কোনো রাসায়নিক নয়, আগুনের সাহায্যেই নেভানো হবে আগুনকে।
বিষয়টা অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতোই। কিন্তু আগুন দিয়ে আগুন নেভানোর আসল রহস্যটা কী? সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে লাভাস্রোতের রহস্যটা একবার বুঝে নেওয়া দরকার বৈকি। সাধারণত, উত্তপ্ত লাভা স্রোতের কারণে অগ্নিসংযোগ ঘটে যে-কোনো পদার্থে। তবে লাভাস্রোত প্রবাহিত হয়ে যাওয়ার পর শীতল হয়ে জমাট বাঁধা শুরু করে লাভার উপরিতল। ধীরে ধীরে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভেতরের অংশ। শেষে অক্সিজেন না পেয়ে থিতিয়ে পড়ে গনগনে আগুন।
আগুন নেভাতে লাভার এই চরিত্রই ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকন, সোডিয়াম-সহ বেশ কিছু ধাতু ও ধাতব অক্সাইডের মিশ্রণই এই সদ্য-আবিষ্কৃত অগ্নিনির্বাপক। এই পাউডার দাহ্য হওয়ার কারণে, ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছালেই প্রথমে আগুন ধরে যায় তাতে। দহনের পর এই পাউডার গলে গিয়ে তৈরি করে স্বচ্ছ একধরনের তরল। যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে কাচের মতো একটি আস্তরণ তৈরি করে জ্বলতে থাকা পদার্থের ওপর। ব্যাস, তারপরেই অক্সিজেনের অভাবে আগুনের ভবলীলা সাঙ্গ।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন কুইন্সল্যান্ড এবং চিনের বেশ কিছু গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় বাস্তবায়িত হয়েছে এই অভিনব অগ্নিনির্বাপক পদ্ধতি। সাফল্য মিলিছে পরীক্ষামূলক ট্রায়ালেও। এতদিন পর্যন্ত নির্মাণের সময় প্লাস্টিক ও ইস্পাতের তৈরি সামগ্রীতে অগ্নিপ্রতিরোধক কোটিং ব্যবহার করা হত। যা শুধু ব্যয়বহুলই নয়, বিষাক্তও বটে। এবার নতুন বিকল্প এই দুই সমস্যারই সমাধান আনবে বলেই বিশ্বাস গবেষকদের…
Powered by Froala Editor