মৃত্যুর পরই যেন সম্প্রচারিত হয় এই গান, আকাশবাণীকে নির্দেশ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের

বেতারে হেমন্ত ৪

কলকাতা বেতারে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রধানত যে যে বিভাগে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন, সেগুলি হল – রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক, ভজন এবং রাগ-প্রধান। এই সমস্ত বিষয়ের বিবিধ গান নিয়ে চলে এলাম আলোচনার শেষ পর্যায়ে।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড ’৪৩ সালে, ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবির জন্য রেকর্ড করা ‘পথের শেষ কোথায়’ গানটি, প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্তান রেকর্ডস থেকে। নন-ফিল্ম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড ’৪৪ এ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ’৪১ সাল থেকেই ‘বেতার জগৎ’-এ ওঁর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের উল্লেখ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, সেসব রবীন্দ্রসঙ্গীত দেখলে চমকে উঠতে হয় রীতিমতো, কারণ ওগুলির মধ্যে বেশ কিছু গান হেমন্তবাবু পরবর্তীতে গেয়েছেন বলে শোনা যায় না। কয়েকটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ৯ আষাঢ় অর্থাৎ ২৩ জুন, ১৯৪১ সোমবার সকাল ৭-৪৫ মিনিটে হেমন্ত গাইছেন রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গান ‘এই সকাল বেলার বাদল আঁধারে’ এবং ঐ একই দিনে সকাল ৮-৪৫ মিনিটে গাইছেন আরেকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’।

পরের বছর ১ নভেম্বর, ১৯৪২ সকাল ৭-৪০ মিনিটে গাইছেন ‘জীবন মরনের সীমানা ছাড়ায়ে’, ঐ মাসেরই ৯ তারিখ সকাল ৮-৪০ মিনিটে গাইছেন ‘আমার আর হবে না দেরি’ ও ‘আমার প্রাণের মাঝে’ এবং রাত ৮-১৫ মিনিটে গাইছেন ‘হার মানালে গো’, সবকটিই রবীন্দ্রসঙ্গীত। ১৯৪৮ সালে একদিন গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের দুটি বর্ষার গান, যার মধ্যে একটি ছিল ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো’। এবার এই গানগুলিই একটু মিলিয়ে দেখা যাক কোম্পানির রেকর্ডিং-এর সঙ্গে। ‘এই সকাল বেলার বাদল আঁধারে’, ‘আমার প্রাণের মাঝে’ এবং ‘হার মানালে গো’ এই তিনটি গানের কিন্তু কোনো কোম্পানির রেকর্ডিং নেই। ‘আমার আর হবে না দেরি’ কলম্বিয়া কোম্পানি থেকে রেকর্ড করলেন ’৪৪ সালে (নন-ফিল্ম রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম রেকর্ড), ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো’ রেকর্ড করেছেন দুইবার, একবার ’৫২-তে এবং  আরেকবার ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’ শিরোনামের একটি রেকর্ডে, যেখানে একই শিরোনামের গানটিও গাইলেন অনেক পরে ’৮৩-তে, ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ গাইলেন ‘গীতিগুচ্ছ’ এলপিতে ’৮৪ সালে, দুটিই প্রকাশিত হল এইচএমভি থেকে।

তখন রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে নিয়মিত গাইছেন অন্য বিভাগের গান। ভজন গাইলেন ‘যো এক নীড় হ্যায়’ এবং ‘মনো মন্দিরমে আও’ ৯ নভেম্বর, ’৪২ সালে। একই বছরে একদিন সকাল ৭-৪৫ মিনিটে গাইলেন ‘আও চক্র-সুদর্শন-ধারী’। এর পরেই গাইলেন একটি আধুনিক গান ‘আমার চলার পথ – ভাবগীতি’ (তখন ‘বেতার জগৎ’-এ গানের ধরণ উল্লিখিত হত, যেমন ‘আকাশে দুটি তারা’ গানটির রেকর্ড বাজানোর জায়গায় লেখা ছিল ‘কাব্যগীতি’)। আরেকটি আশ্চর্যের বিষয়, সারাজীবন চির-পরিচিত বৈষ্ণব-বিনয়ে ‘আমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অজ্ঞ’ বলে আসা হেমন্ত তখন গাইতেন রাগ-প্রধান গান! ২৩ জুন, ’৪১ সালে সকালে গাইছেন ‘প্রভাতে আজ – রাগ-প্রধান’। গান ছাড়াও নিয়মিত ফিচার প্রোগ্রামও করছেন তিনি, যে কথা আগে পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। ঐ সময়েই অর্থাৎ ১৯৪২ সালে একটি ইন্টারেস্টিং বিজ্ঞাপন দেখা গেল ‘বেতার জগৎ’-এ আকর্ষণীয় স্টাইলে। সেটি ছিল এইরকম – “তোমাদের লেখা গান গেয়ে শোনাবেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আগামী শুক্রবার – ১৮ই আগষ্ট সন্ধ্যা পাঁচটায়”! 

এই অনুষ্ঠানে পাঠানো গানের মধ্যে থেকে আগে থেকে বেছে রাখা গান শিল্পী নিজে সুর করে গাইতেন। এই প্রসঙ্গে বলি, ছোটোদের গানে সুর করে গেয়েছিলেন পরবর্তীতে ’৮২ সালে একবার ‘গল্পদাদুর আসর’-এ। এই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন ‘পার্থ ঘোষ’ এবং এক রবিবারে বিশেষ অতিথি ছিলেন হেমন্ত। বলেছিলেন, আমি তো এত কঠিন শব্দ উচ্চারণ করতে পারব না, তাই কথা কিছু বদল করে গাইছি। গেয়েছিলেন ‘পাল্কির গান’-এর অংশবিশেষ এবং ‘ও আমার ছোট্ট বন্ধুরা শোনো’ গানদুটি। শুনিয়েছিলেন একটি ভূত দেখার গল্প। সাড়ে তিনটে থেকে চারটে পর্যন্ত হওয়া আধঘণ্টার অনুষ্ঠান হেমন্ত-র খাতিরে বাড়ানো হয়েছিল আরও তিরিশ মিনিট।

আরও পড়ুন
হেমন্তের গানে রাগ ভুললেন পঙ্কজ মল্লিক, সজল হয়ে উঠল দুটি চোখ

চল্লিশের দশকে বেতার হেমন্তর উপার্জনের অন্যতম উৎস - এটা খেয়াল রাখতে হবে। পঞ্চাশের দশকে বেতারে গাওয়া হেমন্ত-র গানের সংখ্যা সাংঘাতিক রকমের কম, কারণ তখন তিনি বোম্বেতে প্রচণ্ড ব্যস্ত। ষাটের দশকে অবশ্য এই পরিসংখ্যান খানিক বেশি। সেইসময়ে হেমন্তবাবুর প্রোগ্রামের কথা বেশিরভাগ সময়েই ‘বেতার জগৎ’-এ উল্লিখিত হত না ওঁর কলকাতার আসার অনিশ্চয়তার জন্য। কলকাতায় এলে গান করতেন।

’৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় বেশ কিছু দেশাত্মবোধক গান আকাশবাণীতে গাইলেন হেমন্ত। ২০ নভেম্বর, ’৬২-তে গাইলেন তিনটি স্বদেশ পর্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘নাই নাই ভয়’, ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে’ এবং ‘ও আমার দেশের মাটি’। একই বছর গাইলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ও নিজের সুরে ‘বুদ্ধ-গান্ধী-বিবেকানন্দ’, ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘এ দেশের মাটির পরে’ ইত্যাদি দেশাত্মবোধক গান। শেষ গানদুটি পরবর্তীতে ’৭১ সালে বাণিজ্যিকভাবে রেকর্ড করেন এইচএমভি-তে। এছাড়াও গেয়েছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে ‘কাশ্মীর-পাঞ্জাব-সিন্ধু-রাজস্থান’ গানটি।

’৫৯ সাল নাগাদ আকাশবাণী ভবনের স্থান-বদল ঘটে। পুরোনো বহু রেকর্ডিং-স্পুল গার্স্টিন প্লেসের অফিসে ফেলে আসা হয়। তার আগের আকাশবাণীর রেকর্ডিংগুলি পাবার সম্ভাবনা তাই খুব কম। এরপরের কিছু গানের কথা বলি। পরবর্তীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন তুলনামূলক বেশি। বিভিন্ন সময়ের কিছু বিশেষ উদাহরণ দিই, সেই সঙ্গে বন্ধনীতে থাকুক বাণিজ্যিক রেকর্ডিং-এর সাল। ২০ নভেম্বর, ’৬০-এ গাইছেন ‘কেন চোখের জলে’(’৬২), ‘আমি তখন ছিলেম মগন’, ‘সঘন গহন রাত্রি’(’৭৭), ’৬৫-তে গাইছেন ‘কাহার গলায় পরাবি’(’৫১), ‘তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি’, ‘যখন ভাঙল মিলনমেলা’(’৫৫ এবং ’৮৩), ‘তোমায় গান শোনাব’(’৪৭), ‘মনে রবে কিনা রবে’(’৫৪), ‘নাই যে বাকি সময় আমার’(’৫১)। ২৮ ডিসেম্বর, ’৭৪-এ সকাল ৮-৪৫ নাগাদ গাইলেন ‘চণ্ডালিকা’র অংশবিশেষ, যেটি পরবর্তীতে বেতারের টেকনিক্যাল সমস্যার সময়ও হঠাৎ করে বেজে উঠত। বাহুল্যভয়ে অতিরিক্ত উদাহরণ দেওয়া থেকে বিরত থেকে কয়েকটি বিশেষ রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথামাত্র উল্লেখ করছি যেগুলি হেমন্তবাবুর বাণিজ্যিক রেকর্ডে পাওয়া যায় না – ‘আমি তখন ছিলেম মগন’, ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস’, ‘মনমোহন গহন যামিনী শেষে’, ‘বিশ্বযখন নিদ্রামগন’, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’, ‘যদি হায় জীবনপূরণ’, ‘তিমির দুয়ার খোলো’, ‘ওরে ভীরু, তোমার হাতে’, ‘এখন আর দেরী নয়’ ইত্যাদি। যেগুলির সাল উল্লিখিত হল না, সেগুলির বাণিজ্যিক রেকর্ড নেই।

আরও পড়ুন
‘শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’, ভারত-চিন যুদ্ধে গানই হাতিয়ার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের

পঞ্চকবির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত অন্যদের গানও গেয়েছেন তিনি। ২৮ ডিসেম্বর, ’৭৪-এ গাইলেন দুটি নজরুলগীতি ‘সেদিন বলেছিলে’(গানটির স্বরলিপিকার গায়ক স্বয়ং) এবং ‘পথ চলিতে যদি চকিতে’(পরে গেয়েছেন ‘বারবধূ’ ছবির জন্য) এবং ’৭৫-এর ২১ এপ্রিল গাইলেন গাইলেন আরও দুটি ‘এ কী সুরে তুমি গান শোনালে’ এবং ‘বসিয়া বিজনে’। এছাড়াও ‘মেঘলা নিশিভোরে’ নজরুলগীতিটি আকাশবাণীতে গেয়েছিলেন সেকথা আগে বলেছি। ২২ জুন, ’৭৫-এ গাইলেন দুটি অতুলপ্রসাদী গান ‘কেন এলে মোর ঘরে’(পরে ’৮৫তে ‘অজান্তে’ ছবির জন্য গেয়েছিলেন) এবং ‘তব অন্তর এত মন্থর’। ’৭৪ সালের ২৪ নভেম্বর সকাল ৮-৪৫-এ গাইলেন তিনটি রজনীকান্তের গান ‘স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি’, ‘ঐ বধির যবনিকা’(’৭৩-এ কোম্পানির রেকর্ড) এবং ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে’ এবং ’৭৮ সালের ৩১ আগস্ট গাইলেন আরও দুটি রজনীকান্তের গান ‘আমি অকৃতি অধম’ এবং ‘দেখ দেখি মন নয়ন মুদে’ (দুটি গানই বাণিজ্যিক রেকর্ডে গেয়েছেন ’৭৬-এ)।

হেমন্ত-কণ্ঠে ‘রম্যগীতি’ বা ‘এ মাসের গান’-এর সংখ্যা খুব কম। উল্লেখযোগ্য কিছু গান হল – ‘তাল সুপারি তাল সুপারি’ (সুর – অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়), ‘মাঝে মাঝে মনের আকাশ চমকায়’, ‘আমায় একটু একা থাকতে দাও’ (কথা ও সুর দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়), ‘প্রভু সবার ভালো কর’ (কথা ও সুর দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়), ‘আমার একান্ত প্রাঙ্গণে বরষা এলো’ (কথা বিশ্বনাথ দাস, সুর শিল্পী), ‘যখন ঘুম আসে দুটি চোখে’ (কথা পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুর অসীমা ভট্টাচার্য) ইত্যাদি। এগুলির কোনোটিই বাণিজ্যিক রেকর্ডে প্রকাশিত হয়নি। তখন এরকমও হত যে রেডিওতে গাওয়া কোনো গান পরে রেকর্ডে গাওয়া হত বা হয়ত এর এর উল্টো অর্থাৎ আগে গাওয়া হল রেকর্ডে, পরে রেডিওতে। দুইক্ষেত্রে কখনও শিল্পী থাকতেন একজন, কখনও থাকতেন ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘তোমার যাবার কালে’ গানটি সমরেশ রায় বেতারে গেয়েছিলেন, পরে হেমন্ত রেকর্ড করেন। আবার শ্যামল গুপ্তর লেখা ‘বন্ধু কেমন আছ’ গানটি পাঁচের দশকে শৈলেশ দত্তগুপ্তর সুরে কোম্পানিতে রেকর্ড করেন রবীন মজুমদার, পরে নিজে সুর দিয়ে আশির দশকে বেতারে পরিবেশন করেন হেমন্ত। নিজের রেকর্ড করা বহু আধুনিক গানও বেতারে গেয়েছেন হেমন্ত।

৩১ মে, ’৮৯ সালে সদ্যপ্রয়াত লক্ষ্মীকান্ত রায়ের কথায় ও দীপেন মুখোপাধ্যায়ের সুরে সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্রেনিং-এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আকাশবাণীতে রেকর্ড করেন তিনটি মৌলিক গান – ‘একটাই শুধু প্রশ্ন আমার’, মাথার উপর আকাশ’ এবং ‘ঐ মূর্তিটা তৈরি যে’। স্টুডিও রেকর্ডিং-এ গৃহীত এই তিনটি গানই আকাশবাণীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সর্বশেষ কাজ। এই রেকর্ডিং প্রয়াণ-পরবর্তীকালে সম্প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিল্পী স্বয়ং। সেইমতো ২৭ সেপ্টেম্বর সারাদিন ধরে মহাপ্রয়াণের ঘোষণা এবং শিল্পীর কণ্ঠে বিভিন্ন গানের মাঝখানে প্রায় ছয়-সাতবার ‘একটাই শুধু প্রশ্ন আমার শ্মশানেতে কত লোক হবে’ গানটি বাজানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন
সরে গেলেন পঙ্কজ মল্লিক, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র সঙ্গীত পরিচালনায় ২৪ বছরের যুবক হেমন্ত

গান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন হেমন্ত। তাঁর বেশকিছু সাক্ষাৎকারও রয়েছে আকাশবাণী আর্কাইভে। আশা রাখি, এই মহামূল্য রেকর্ডিং আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে এবং পুনরায় শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরা হবে। চারটি পর্বের এই আলোচনায় স্পষ্ট হয় যে ফিল্ম বা নন-ফিল্ম গান বাদেও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কর্মজীবন ও সৃষ্টির জগতের এক বিরাট অংশ কিন্তু বেতারকে ঘিরে, এবং একথা ভুলে থাকলে চলবে না। বেতারে রেকর্ড করা বহু গান বাণিজ্যিকভাবে অপ্রকাশিত বলে সেগুলি শোনার জন্য একমাত্র সম্বল আকাশবাণী আর্কাইভ। ইতিপূর্বে ২০০৭ সালে ‘আকাশবাণী সঙ্গীত’ নামে শিল্পীর আটখানি আকাশবাণীর রেকর্ডিং প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আটখানি গান সংখ্যায় অত্যন্ত কম। তাই, সবশেষে, সাধারণ শ্রোতাদের পক্ষে প্রসার-ভারতী কর্তৃপক্ষর কাছে আমার একান্ত অনুরোধ যে অতিমারীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এইসব মহামূল্য রেকর্ডিংগুলো পুনরায় বাজিয়ে শোনানো হোক বা কম্প্যাক্ট ডিস্কের আকারে প্রকাশ করা হোক। তাহলে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষপূর্তিতে এটিই হবে শিল্পীর প্রতি এক বিরাট শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

তথ্যসূত্রঃ

১) ‘আনন্দধারা’ – হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সম্পাদনা – অভীক চট্টোপাধ্যায়, সপ্তর্ষি প্রকাশন, ২০১৩
২) ‘আমার স্বামী হেমন্ত’ – বেলা মুখোপাধ্যায়, অনুলিখন – পার্থ ঘোষ, সাহিত্যম্, ১৯৯৯
৩) ‘হেমন্তর কী মন্তর’ – সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ, ১৪০৬ বঙ্গাব্দ
৪) ‘বেতার জগৎ’ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা
বিশেষ সহযোগিতাঃ প্রফেসর প্রদোষ ভট্টাচার্য, ডঃ পৃথা কুণ্ডু, জয়দীপ চক্রবর্তী এবং সপ্তর্ষি ঘটক 

আরও পড়ুন
অসিতবরণের সূত্রেই যোগাযোগ আকাশবাণীতে, সেই প্রথম বেতারে গাইলেন হেমন্ত

 (শেষ)

Powered by Froala Editor

More From Author See More