শেষ হল ‘থ্রি ডব্লিউজ’-এর অধ্যায়, প্রয়াত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার স্যার এভারটন উইকস

সালটা ১৯৪৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে প্রথম বড় ক্রিকেট ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামলেন স্যার এভারটন উইকস। ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকরা স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা চমকে গিয়েছেন। ব্যাট হাতে বাইশ গজের পিচ শাসন করছেন এক কালো চামড়ার মানুষ! এমনটা তো দেখতে অভ্যস্ত নন তাঁরা। হ্যাঁ, একটা পরিবর্তন সেদিন ঘটতে শুরু করেছিল। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার জন্য মাত্র ১৪ বছর বয়সে পড়াশুনো ছেড়েছিল যে ছেলেটি, তখন তার খুব একটা দুঃখ হয়নি। কিন্তু জীবনের একান্ত সাধনা যে ক্রিকেট সেখানেই যখন জায়গা মিলল না, তখন মন ভেঙে গেল তার। আর কারণটা ছিল কেবল তার গায়ের রং। ক্রিকেট তখনও সাদা চামড়ার মানুষের খেলা।

তবে ভাগ্য অনেককেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়। এভারটন পেলেন তেমনই সুযোগ। কিছুদিন বিভিন্ন ফুটবল টিমে খেলার পর তিনি যোগ দিলেন সেনাবাহিনীতে। আর এর ফলেই সুযোগ পেলেন বাইশ গজে পা রাখার। ১৯ বছরে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ এবং তারপর ২২ বছরে প্রথম টেস্ট ম্যাচ, কেরিয়ারটা তৈরি করে নিতে আর বেশি সময় লাগেনি। ৬টা টেস্ট সেঞ্চুরি আর ১৩টা হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি এখনও এক অবিসংবাদী ক্রিকেটার। ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড তাঁর থেকে সামান্যই বেশি।

এভারটন উইকসের সঙ্গে প্রায় সমসময়ে ক্রিকেটের মাঠে নেমেছিলেন স্যার ফ্রাঙ্ক অরওয়েল এবং স্যার ক্লাইড ওয়ালকট। যে তিনজনের নাম সবসময় একসঙ্গে উচ্চারিত হয়। তিনজনে যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের চেহারাটাই বদলে দিয়েছিলেন। আজ সবটাই ইতিহাস। কিংবদন্তি সেই 'থ্রি ডব্লিউজ' আজ একেবারেই শেষ। ৯৫ বছর বয়সে মারা গেলেন শেষ সদস্য স্যার এভারটন উইকস। শেষ হল বিশ্ব ক্রিকেটের একটি অধ্যায়।

১৯৫৮ সালে মাত্র ৩৩ বছরে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েও স্যার এভারটন খেলার মাঠ থেকে দূরে থাকতে পারেননি। কোচ, কমেন্টেটর, এমনকি আম্পায়ার হিসাবেও মাঠে দেখা গিয়েছে তাঁকে। দেশের হয়ে ব্রিজ খেলাতেও হাত পাকিয়েছেন। এমনকি ৯০ বছর বয়সের পর থেকে বারবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েও প্রতিদিনের সাঁতার কাটা বন্ধ করেননি। হয়তো ওটুকুই ছিল তাঁর বেঁচে থাকার রসদ। জীবনকালের দৈর্ঘ্যেও তাই পিছনে ফেলে দিলেন অনেক প্রতিযোগীকে। ৯৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘকাল জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সারা বিশ্বের ক্রিকেট পরিবার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড তো শোক জ্ঞাপন করেছে, সেইসঙ্গে ট্যুইটারে শোকবার্তা প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও। যে বোর্ডের কাছে একসময় মূর্তিমান ত্রাস ছিলেন স্যার এভারটন।

আরও পড়ুন
সচিনকেও টপকে গেলেন দ্রাবিড়, গত ৫০ বছরে দেশের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার তিনিই

Powered by Froala Editor